বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি স্মৃতিচারণ করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে কম সময়ে হারিয়েছি। আর আমাদের ব্যর্থতা হলো উনাকে আমরা বাঁচাতে পারেনি। একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে বাঁচানোর নিরাপত্তার দায়িত্ব যে সকলের থাকে সেখানেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আর ব্যর্থ হয়ে আমরা অপূরনীয় ক্ষতির স্বীকার হয়েছি।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 'বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস'- উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ওই সময়ের অকথিত ঘটনাবলীর উপর বক্তব্য রাখেন ড. কামাল হোসেন।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন ঘাটতি হলে মনে করতে হবে যে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতির পিতাকে সবার উপরে রাখতে হবে এবং আমরা সবাই উনাকে শ্রদ্ধা করি।
ড. কামাল বলেন, আমি তো মনে করি, স্বাধীনতা দিবসের দিনে স্কুল ও কলেজের ছেলে মেয়েদেরকে জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া উচিত। উনার যে স্বাক্ষরিত দলিল, সেটা তারা স্বচক্ষে দেখে আসুক। মূল কথা হলো, বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উনার কথা যেন আমরা পালন করি। আর পালন করার জন্য আমরা ষোলআনা ঝুঁকিও নিতে পারি। আজকে আমরা শপথ নিতে পারি যে, বঙ্গবন্ধু যেটা (সংবিধান) লিখিতভভাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন, সেটাতে হাত দেওয়া মানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছেন যে অন্যায়ের সাথে কোন আপস করা চলবে না। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। উনাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাতে চাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আর উনি ৭২'র সংবিধানে স্বাক্ষর করে দিয়ে গেছেন। যেটা জাদুঘরে সংরক্ষিত। এক নাম্বার কথা লেখা আছে, দেশের মালিক জনগণ। এটা শুধু উনি স্বাক্ষর করে দিয়ে যাননি। এটা উনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। আর এটা কারো কেড়ে নেয়ার অধিকার এবং ক্ষমতা নাই। তাই মালিক হিসেবে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও রুখে দাঁড়াতে হবে। যারা অপরাধ করছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ এরা অসাংবিধানিক কাজ করছে। বঙ্গুবন্ধু'র যে আদেশ ছিল, সেটা তারা অমান্য করছে। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ সংবিধান, যেটা বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষর করে দিয়ে গেছেন। আর উনি যে আমাদের মালিক করে গেছেন, সেই মালিকানা আমরা ছাড়তে পারি নাই।
স্বাধীনতা মানে দেশ জনগণের, কোন ব্যক্তির নয় মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, এখানে স্বৈরতন্ত্র থাকার কোন অবকাশ নেই। গণতন্ত্র থাকবে, নির্ভেজাল গণতন্ত্র।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অসাধারণ নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। সেই নেতৃত্বের ফলেই এই স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছিল। আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলেছে। আজকে শ্রদ্ধার সাথে উনার (বঙ্গবন্ধু) কথা স্মরণ করি। উনার নেতৃত্বের কথা স্মরণ করি। আর বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন উনাকে সবাই স্মরণ করবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু'র কারাগারে থাকার কথাগুলো উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে হয় না। কারণ উনি সারাজীবন আন্দোলন, সংগ্রাম, মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন- এগুলো একবার নয় কয়েকবার। আর আমার সৌভাগ্য হয়েছিল যে, উনার কর্মী হিসেবে কয়েকটি ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ মূহূর্তে উনার সাহসিকতা দেখার। উনাকে কয়েকবার বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড হবে, এটা হবে, ওটা হবে। কিন্তু উনার মুখ থেকে একটা কথাও বের করতে পারেনি। উনি তখন বলতেন, আমার মৃত্যু লেখা আছে কপালে- তার আগেও হবে না এবং পরেও হবে না। সুতরাং আমাকে হুমকি দিয়ে লাভ নাই।
সংবিধানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে বা যারা এর (সংবিধান) বিরুদ্ধে কাজ করবে, তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ এরা দেশ, সংবিধান ও স্বাধীনতার শত্রু। তাই আসুন, আমরা সবাই আজকে শপথ গ্রহণ করি- মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেটা যেন আমরা পুরোদমে ভোগ করতে পারি। এজন্য আমাদেরকে সারাদেশে জেলায়-জেলায় এবং থানায়-থানায় সংগঠিত হতে হবে।
তিনি বলেন, সংবিধানে যেটা আছে, সেটা সর্বোচ্চ আইন। আর সংবিধানে যেটা আছে সেটা কারো হাত দেয়ার ক্ষমতা নাই। আর এটাকে রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্যে। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাতে কোন হাত দেয়া যাবে না। আমরা কিছুটা আনন্দবোধ করতে পারি, আমাদের জজ সাহেবরা ঝুঁকি নিয়েও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য কাজ করে গেছেন। আমরা সেদিন দেখলাম সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে যেভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছিল। এটা লজ্জার বিষয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন