কুমিল্লায় পৃথক দু’টি অভিযান চালিয়ে ২৫ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় আটক আটক করা হয়েছে মাদক পাচারে জড়িত ৫ ব্যক্তিকে। বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাতে জেলার সদর উপজেলার আলেখারচর এবং দেবীদ্বার উপজেলার গোপালনগর এলাকা থেকে এসব ইয়াবা উদ্ধার ও মাদক কারবারীকে আটক করা হয়।
আটক মাদক কারবারীরা হচ্ছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই পাঁচ ধারা গ্রামের মৃত আমির হোসেনের পুত্র হানিফ মিয়া (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার নয়নপুর (কোনা ঘাটা) গ্রামের মৃত অহেদ সরকারের পুত্র আলাল সরকার (৩০), একই এলাকার ছিদ্দিকর রহমানের পুত্র শফিকুল ইসলাম (৩৫), মৃত আবদুল মান্নানের পুত্র রেজাউল করিম (৪২) এবং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের পুত্র নাজমুল মিয়া (২৬)।
আটককৃতদের মধ্যে চান্দিনার হানিফ মিয়ার কাছ থেকে ২০ হাজার এবং বাকি ৪ জনের কাছ থেকে ৫ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. শাখাওয়াত হোসেন। শুক্রবার সকালে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন জানান, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে কিছু মাদক ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা দিয়ে পাচার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেÑ এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি পুলিশের এসআই পরিমল দাসের নেতৃত্বে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম এলাকায় তল্লাশী চৌকি বসানো হয়। তথ্য অনুযায়ী মাদক বহনকারী গাড়িটিকে থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয় পুলিশ।
কিন্তু সিগন্যাল অমান্য কুমিল্লামুখে ছুটতে থাকে গাড়িটি। সাথে সাথে বেতার বার্তায় খবরটি পাঠানো হয় জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে। তৎক্ষণাৎ গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি টিম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর উপজেলার আলেখার চরে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়িটি আটক করতে সক্ষম হয়। পরে গাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে ৭টি প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় ২০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার এবং গাড়ির চালক হানিফ মিয়াকে আটক করা হয়।
পুলিশের ভাষ্য, আটক হানিফ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, ইতোমধ্যে সে বহুবার টেকনাফ থেকে গাড়িতে করে মাদক এনে দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার করেছে।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার উপজেলায় পৃথক আরেকটি অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার ও ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে ডিবি পুলিশের আরেকটি টিম। আটক চারজন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাচালানির মাধ্যমে ইয়াবা সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পৃথক অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার ও জড়িত ৫ জনকে আটকের ঘটনায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আজিম উল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ইয়াবা পাচারে এবার চুম্বকের অভিনব ব্যবহার:
শুক্রবার রাতে আলেখার চর থেকে ২০ হাজার ইয়াবাসহ মোহাম্মদ হানিফকে আটক করার ঘটনায় এসব ইয়াবা পাচারে অভিনব পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিলো বলে জানায় ডিবি পুলিশ।
মাইক্রোবাসের পেছনে অতিরিক্ত চাকার রিংয়ের সাথে চুম্বক দিয়ে আটকানো কালো ট্যাপ করা অবস্থায় ইয়াবাগুলো পাওয়া যায়। সাধারনত মাদক পাচারকারীরা পুলিশের চোঁখ এড়াতে এই নতুন নতুন এসব পদ্ধতি অবলম্বন করে। পুলিশ জানায়, ইয়াবা পাচারে চুম্বকের এমন ব্যবহার নতুন এবং অভিনব। এভাবে ইয়াবা কিংবা মাদকপাচারের ঘটনা এর আগে চোঁখে পড়েনি। টেকনাফ থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান আসবে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আলেখারচর এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ।
তল্লাশি চলাকালে কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাসের পেছন থেকে এসব ইয়াবা পাওয়া যায়। আটক হওয়া মাইক্রোবাস চালক মোহাম্মদ হানিফ কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই পাঁচধরা গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে।
গতকাল শুক্রবার সকালে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পৃথক অভিযানে কোটি টাকা মূল্যের ২৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধারসহ ৫ জনকে আটকের তথ্য জানায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোঃ শাখাওয়াত হোসেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আজিম উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
একই রাতে দেবিদ্বারের গোপালনগর এলাকা থেকে ৫ হাজার ইয়াবাসহ ৪ জনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন