ওয়েবডেস্ক: ঝকঝকে সাদা দাঁত ও ঝলমলে হাসি কে না পছন্দ করে। কিন্তু অনেকেই সেটি করে উঠতে পারেন না। হাসতে গিয়ে লুকিয়ে নিতে হয় দাঁত। কারণ হাসির ফাঁকে বেরিয়ে পরে হলদেটে দাঁত। তবে কারো কারো দাঁতের মূল রং-ই হলদেটে হয়। আবার কারো দাঁত নানান কারণে হলুদ হয়ে যায়। তার মধ্যে রয়েছে কিছু খাবারের প্রভাব, আবার কিছু কিছু অভ্যাসও দাঁত হলুদ করে দেয়। তবে নানান কারণে যেমন দাঁত হলুদ হয়ে যায় তেমন নানান ঘরোয়া উপায়ে হলুদ হয়ে যাওয়া দাঁত সাদাও করা যায়।
এই ঘরোয়া উপায়ে যে উপকরণগুলি লাগে সেগুলি প্রত্যেক বাড়িতেই কম-বেশি থাকে। সেগুলি ব্যবহারের পদ্ধতিও বেশ সহজ। এই সাদা করার পদ্ধতিগুলির সাহায্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করা হয়। সেই সঙ্গে দাঁত এবং মাড়ির স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটানো হয়।
দেখে নেওয়া যাক কী ভাবে হলুদ দাঁত সাদা করে তোলা যায়?
১| পাতি লেবুর খোসা
পাতিলেবু সব বাড়িতেই কম-বেশি খাওয়ার কাজে ব্যবহার হয়। ফলে বাড়িতে থাকেই। সেই পাতিলেবুর খোসা এক মুঠো নিয়ে দুই-তিন দিন রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর মিক্সিতে দিয়ে ভালো করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। সেটি একটি পরিষ্কার ঢাকনাওয়ালা পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। এ বার তার থেকে দুই চামচ গুঁড়ো নিয়ে নিতে হবে। সেই গুঁড়োতে এক চামচ গরম জল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এ বার এই পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই-তিন দিন এটি দিয়ে দাঁত মাজতে হবে। এতে পাতিলেবুর খোসার গুণাগুণ দাঁতের যত্ন নেবে। এর মধ্যে থাকা ব্লিচিং প্রপার্টিস দাঁতের হলদে দাগ তুলে দেবে।
২। অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে রয়েছে প্রচুর উপকারী উপাদান। এই উপাদানগুলি দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণুদের মেরে ফেলে খুব দ্রুত। সেই সঙ্গে হলদে ভাবও তাড়াতাড়ি দূর করে দেয়। সপ্তাহে খুব বেশি দুই দিন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ব্যবহার করা যাবে। এই অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে জল মিশিয়ে তা দিয়ে কুলকুচি করতে হবে। তার জন্য এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার নিতে হবে। তার সঙ্গে তিন চামচের মতো জল মেশাতে হবে। এই ভাবে তৈরি হবে মাউথ ওয়াশ। এই মাউথ ওয়াশ ব্যবহারের পর অবশ্যই ঠান্ডা জল দিয়ে কিছুক্ষণ কুলকুচি করে নিতে হবে।
৩| বেকিং সোডা
বেকিং সোডাও সকলের ঘরেই মোটামুটি থাকেই। সেই বেকিং সোডাও দাঁত সাদা করতে কাজে লাগে। এক চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে দুই চামচ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। সেই পেস্ট ব্রাশে করে নিয়ে দাঁত মাজতে হবে। এই পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্রাশ করলে হলদেটে ভাব দূর হবেই। সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলিও আর থাকবে না। ফলের দাঁতের অন্যান্য রোগও হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
৪| নারকেল তেল দিয়ে কুলকুচি করতে হবে
নারকেল তেলে থাকে একটি বিশেষ ধরনের অ্যাসিড। সেই বিশেষ ধরনের অ্যাসিডটি মুখের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মেরে ফেলে। ফলে প্ল্যাকের মতো সমস্যা দূর হয়। ফলে দাঁত সুন্দর থাকে। নারকেল ব্যাবহারের পদ্ধতি হল কোনো কিছু না মিশিয়ে। সরাসরি। দুই চামচ নারকেল তেল মুখে নিয়ে কুলকুচি করতে হবে টানা পাঁচ মিনিট। নিয়মিত করে ফল অবশ্যই মিলবে।
৫। তিল
তিল ব্যবহারের পদ্ধতি হল, চার চামচ তিল ভালো করে বেটে তৈরি করে নিতে হবে পেস্ট। সেই পেস্ট দিয়ে সপ্তাহে অন্তত চার দিন দাঁত মাজলে হলদে ভাব দূর হবে। সেই সঙ্গে উন্নতি হবে এনামেলের গঠনেও। ফলে দাঁত হলদে দেখার আশঙ্কা থাকবে না। এটি গেল একটি পদ্ধতি। তা ছাড়াও অল্প তিলের তেল মুখে নিয়ে কুলকুচি করলেও উপকার পাওয়া যায়।
৬। নিমের দাঁতন
দাঁতের যত্নের অন্যতম সুপরিচিত নাম হল নিমের দাঁতন। বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই নিমের দাঁতন ব্যবহার হয়ে আসছে। নিমের ডালে রয়েছে, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। তার গুণে ক্যাভিটির মতো সমস্যা তো দূরে যায়। সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়। অবশ্যই দূর হয় দাঁতের হলদে ভাবও। তা ছাড়া মাড়ির যে কোনো রকম সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। তা ছাড়া নিমের ডাল শুকিতে নিয়ে পাউডার বানিয়ে নিয়ে সেই পাউডারও দাঁত মাজার কাজে নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতেও উপকার একই মেলে।
৭। কলার খোসা
দাঁতের যত্নে অন্য তম উপকারী উপাদান হল কলার খোসা। একটা কলার খোসা নিতে হবে। তার ভেতরের সাদা অংশটা দুই মিনিট দাঁতে ঘষতে হবে। মোটামুটি ভাবে এক থেকে দুই সপ্তাহ এ ভাবে দাঁতের যত্ন নিলে হলদে ভাব দূর হবে। তবে একটি বিষয় হল খোসাটি ছাড়ানোর পর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহার করতে হবে। তবেই উপকার পাওয়া যাবে। কিছু দিন ফেলে রেখে খোসার ব্যবহার করলে তা বেকার। কোনো কাজেই লাগবে না।
৮| মধু
দাঁতের যত্নে মধুর কোনও বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে চার চামচ মধুর সঙ্গে দুই চামচ ভিনিগার মিশিয়ে নিতে হবে। সেই মিশ্রণ দিয়ে দাঁত মাজতে হবে। নিয়মিত করলে অল্প দিনেই দাঁতের হলদে ভাব দূর হবে। সঙ্গে দাঁতের উপরের অংশের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
৯। পুদিনা পাতা
টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজার পরে পুদিনা পাতার ব্যবহার করতে হবে। কয়েকটি পুদিনা পাতা থেঁতো করে তা দাঁতে এবং মাড়িতে ঘষলে মুখের দুর্গন্ধ যেমন দূর হবে তেমনই দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়াও মারা পড়বে। দাঁতের নানান সমস্যা দূরে থাকবে। দাঁতের হারিয়ে যাওয়া সাদা ভাব ফিরে আসবে।
১০| লবঙ্গ এবং নুন
আজকাল অনেক টুথপেস্টেই লবঙ্গ আর নুন থাকার কথা দাবি করা হচ্ছে। তার কারণ হল দাঁতকে সুস্থ রাখতে এই দু’য়ের কোনো তুলনা হয় না। দাঁতের যত্নে লবঙ্গ তেলের ব্যবহার বহু প্রাচীন কাল ধরেই হয়ে আসছে। তেমনই কাঁচা লবঙ্গও খুবই উপকারী। লবঙ্গের সঙ্গে লাগবে নুন। এই দুই দাঁতের হলুদ দাগ-ছোপ দূর করে। তার জন্য প্রথমে লবঙ্গ গুঁড়ো করে নিতে হবে। সেই গুঁড়ো থেকে এক চামচ নিয়ে তাতে সম পরিমাণ অর্থাৎ এক চামচ নুন মিশিয়ে নিতে হবে হবে। এ বার তা দিয়ে দাঁত মাজতে হবে। নিয়মিত এই ভাবে দাঁতের যত্ন নিতে হবে। তা হলে দাগমুক্ত ঝকঝকে দাঁত পাওয়া যাবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন