চীনের করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় কাঁপছে পুরো বিশ্ব। মারণ ভাইরাসে সংক্রমণের শঙ্কায় তটস্থ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও। দুর্যোগপূর্ণ এই পরিস্থিতিতেই সুদূর আফ্রিকা থেকে ধেয়ে আসছে লাখে লাখে মরু পতঙ্গ। ফলে আফ্রিকা, নিকট প্রাচ্যের পাশাপাশি মহাবিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ভারত এবং পাকিস্তানও।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতোমধ্যে একটি বিবৃতিতে `জরুরি অবস্থা` ঘোষণা করেছেন৷ প্রায় দুই দশক পর এমন বিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে দেশটি৷

প্রসঙ্গত, এই মরু পঙ্গপালের হানায় মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যেতে পারে মাইলের মাইল ফসলি জমি৷ একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য সাবাড় করে ফেলতে সক্ষম পতঙ্গদের এক কিলোমিটার বিস্তৃত একটি পাল৷

পঙ্গপালের হানায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ‘হর্ন অব আফ্রিকা’৷ ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া হয়ে এরা ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকার ১৪টি দেশে৷ উত্তর আফ্রিকা থেকে পৌঁছে গেছে উগান্ডা এবং দক্ষিণ সুদানে৷ গত ২৫ বছরের মধ্যে সেখানে এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷ 

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, ফেব্রুয়ারি নাগাদ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷ খাদ্য সঙ্কট ও মানবিক বিপর্যয়ের হুমকিতে রয়েছে আফ্রিকার এক কোটির বেশি মানুষ৷ ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া, জিবুতি, ইরিত্রিয়া পাঁচটি দেশের জন্য সাত কোটি ৬০ লাখ ডলার তহবিলের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি৷

এফএও বলছে, তারা আক্রান্ত দেশগুলোর পাশাপাশি পতঙ্গ ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন প্রতিবেশী দেশগুলোর উপরও নজর রাখছে৷ তার মধ্যে এমনকি ওমান, সৌদি আরব, সুদান, ইয়েমেনও রয়েছে৷ মরু পতঙ্গদের উপদ্রব শুরু হয়েছে ইরানেও৷ 

এদিকে ভয়ানক এই পঙ্গপালের ঝড় পৌঁছে গেছে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে৷ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানকার কৃষি ও স্বাভাবিক জীবনযাপন৷ ইতোমধ্যে `জরুরি অবস্থা` ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।

পঙ্গপালের হুমকিতে আছে ভারতও৷ গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী মরু অঞ্চলগুলোতে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে৷ এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গুজরাটের ১৭ হাজার হেক্টর জমি। তিন লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিও এই পতঙ্গদের শিকার হয়৷

উল্লেখ্য, মরু পতঙ্গদের জীবনকাল মাত্র তিনমাস৷ জন্মের ৬ সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণ বয়স্ক হয়ে ওঠে এরা৷ এক মাসের মধ্যেই ডিম পাড়তে সক্ষম৷ আর দুই সপ্তাহের মধ্যেই এদের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়৷

তিনমাসের মধ্যেই মরু পতঙ্গরা তাদের জনসংখ্যা ২০ গুণ বৃদ্ধি করে ফেলতে সক্ষম৷ ছয় মাসের মধ্যে যা ৪০০ গুণ আর নয় মাসের মধ্যে আট হাজার গুণ বেড়ে যেতে পারে৷ শুধু প্রয়োজনীয় বৃষ্টি আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেই চলে৷

দৈনিক প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে মরু পতঙ্গরা৷ আর এভাবেই চলে যায় এক দেশে আরেক দেশে৷

২০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টি হয়, নিকট প্রাচ্য ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার এমন দেশগুলোতে এই পতঙ্গদের দেখা যায়৷ জাতিসংঘের এফএও এর তথ্য অনুযায়ী এক কোটি ৬০ লাখ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল এই অঞ্চলের ত্রিশটি দেশে এদের অস্তিত্ব রয়েছে৷