আন্তর্জাতিক ডেস্ক- বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সামরিক জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘বড় ধরনের প্রতিশোধ’ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ইতোমধ্যে সামরিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে দেশটি। ইরানের সমস্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোকেও রাখা হয়েছে উচ্চ-সতর্কতায়। নিজেদের আকাশসীমায় মহড়া শুরু করেছে যুদ্ধবিমান।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে উচিৎ শিক্ষা দিতে চায় ইরান। আর সে জন্য তারা যুদ্ধকেই বেছে নিতে চাইছে। এরই মধ্যে ইরানের পশ্চিম আকাশে যুদ্ধবিমানের মহড়া চলছে। সতর্ক অবস্থানে থেকে পাহারা দিচ্ছে যুদ্ধবিমান। মোতায়েন করা হয়েছে এফ-১৪ যুদ্ধবিমানও।
সামরিক প্রস্তুতি নিলেও এখন পর্যন্ত ইরানের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে দেশটির কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্যে যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামিনি বলেন, ‘অপরাধীদের জন্য ভয়াবহ প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’
ইরানের সেনাবাহিনীর (ইসলামিক রেভলুশনারি গার্ডস বা আইআরজিসি) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রমজান শরিফ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তোমরা কড়া জবাবের জন্য অপেক্ষা করো।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখতে রাভানচি তো সরাসরিই সামরিক হামলার কথা বললেন। শুক্রবার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমেরিকা যে হামলা চালিয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে হামলা।
তিনি আরও বলেন, ‘এই হামলা একটি নতুন অধ্যায়, যা ইরানের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধের সূচনা করলো। সামরিক হামলার জবাব সামরিক হামলা দিয়েই হয়। আর সেটা কখন, কিভাবে এবং কোথায় হবে ভবিষ্যতই তা বলে দেবে।’
সিএনএনের অনুষ্ঠানে ইরানের রাষ্ট্রদূত পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ইরান এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার সব ধরনের অধিকার রাখে।’
এদিকে পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে কয়েকটি শহরে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে নিরাপত্তাও বাড়িয়েছে দেশটি।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বড় শহরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসব শহরের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
নিউইয়র্কের মেয়র বিল ড্য ব্লাসিনো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ইরান বা তাদের সন্ত্রাসী মিত্রদের যেকোনও হামলা ঠেকাতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, এই হুমকি মোকাবিলায় দীর্ঘদিন সজাগ থাকবে শহর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শাদ ওলফ বলেছেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও অন্যদের সঙ্গে মিলে দেশজুড়ে কাজ করছে তার দফতর। এখন পর্যন্ত কোনও হুমকি শনাক্ত না হলেও যেকোনও কিছুর জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যে মার্কিন সরকারের একটি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে ইরানের হ্যাকাররা।
‘ফেডারেল ডিপোজিটরি লাইব্রেরি প্রোগ্রাম’ পরিচালনার জন্য মার্কিন সরকার ওই ওয়েবসাইটটি চালু রেখেছিল। এর মাধ্যমে সরকারি প্রকাশনা জনগণ বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন। কিন্তু সেই ওয়েবসাইটটি শনিবার থেকে হ্যাকারদের আয়ত্তে চলে যায়।
ওয়েবসাইটি আয়ত্তে নেওয়ার পর হ্যাকাররা সেখানে একটি বার্তা পোস্ট করেন। বলা হয়, ‘আল্লাহর নামে। >>>>> ইরানের সাইবার সিকিউরিটি হ্যাকাররা হ্যাক করেছে<<<<< এটি ইরানের সাইবার সক্ষমতার একটি প্রমাণ! আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি।’
এছাড়া ওই ওয়েবসাইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। যে ছবিতে ইরান ট্রাম্পকে ঘুষি মারছে এমন দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন