সময়মতো মাসিক না হলে অনেকের মনেই চিন্তা ভর করে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- পিরিয়ড দেরি করে হওয়াটা কী স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক?
সাধারণত প্রতি ২৮ থেকে ৩৫ দিন পর পর পিরিয়ড হয়ে থাকে। ১২ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এমনটিই হয়ে থাকে। কিন্তু কখনও কখনও এই সময়টাতে হেরফের হতে পারে। কখনও এক সপ্তাহ পরে হতে পারে পিরিয়ড। আবার মাঝে মাঝে এক মাস কিংবা আরও বেশি সময় পরও হতে পারে। নির্ধারিত সময়ে যদি পিরিয়ড না হয় তাহলে অনেক নারীই দুশ্চিন্তায় থাকেন। বিশেষ করে বিবাহিত নারীরা ঘাবড়ে যান অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করে ফেলেছেন ভেবে।
সময়মতো পিরিয়ড না হওয়া নিয়ে গাইনি বিশেষজ্ঞ, ঢাকা হাসপাতালের ডা. আঞ্জুমান আরা বুলু পরামর্শ দিয়েছেন। জানিয়েছেন, গর্ভধারণ ছাড়াও অন্য আরও কিছু কারণে পিরিয়ডে বিলম্ব হতে পারে। যেমন: গর্ভাবস্থা, বয়স, স্ট্রেস, আর্লি প্রেগনেন্সি লস, কম ওজন, হরমোন বার্থ কন্ট্রোল, এছাড়া শারীরিক নানান সমস্যা থাকে যার জন্য নিয়মিত পিরিয়ড হয় না। এই সমস্যাগুলো যদি হয়ে থাকে তাহলে ভয় না পেয়ে গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নেয়া উচিৎ।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ব্যায়াম
মতে, যে নারীরা খুব কঠিন ডায়েট করেন অথবা কোনও কারণে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক ওজন কমে গেছে ঠিক তখনই পিরিয়ডে অনিয়ম হয়। অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণেও পিরিয়ডে অনিয়ম হতে পারে।
থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
আমাদের গলার নিচে যেই থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে সেটি শরীরের সব কার্যপ্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অথবা কম থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয় তাহলে শরীরের পুরো কার্যপ্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়ে এবং এক্ষেত্রে পিরিয়ডে অনিয়ম হতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম একটি হরমোনাল সমস্যা। শরীরের জরুরি তিনটি হরমোন এস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং টেসটোস্টেরন উৎপাদনের মাত্রা কমে যায় পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হলে। ফলে পিরিয়ডে দেরি হয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে নারীদের মুখে এবং স্তনের চারিদিকে লোমের আধিক্য বেড়ে যেতে পারে। এই সমস্যায় যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
হঠাৎ অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি হলে পিরিয়ডে বিলম্ব হতে পারে। হঠাৎ করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়া হতে পারে। ফলে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পিরিয়ডে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রিয়জনের বিয়োগ, ব্রেকআপ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কিংবা অন্য কোনও বড় ধরনের মানসিক আঘাতের ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
একবার পিরিয়ড দেরিতে হলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। খেয়াল রাখুন। তিন মাস টানা পিরিয়ড না হলে, বছরে নয়বারের কম পিরিয়ড হলে বা প্রতিবার পিরিয়ড হওয়ার মাঝে ৩৫ দিনের বেশি বিরতি থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন