স্বাধীন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ,যশোর থেকে:- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতার এক যুগের অধিক সময় অতিবাহিত করছে।দীর্ঘ বছর কেন্দ্রীয় ক্ষমতার রদবদল ঘটেনি ।কিন্তু রদবদল ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের ব্যক্তিদের। মূল দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই হারিয়েছেন পদ, পদমি, মন্ত্রীত্ব।অঙ্গসংগঠনের নেতারা অনেকেই লোক লজ্বার আড়ালে দিন অতিবাহিত করছেন নিজ ভুলের মাসূল দিতে।অবার অনেকেই দিনের পর দিন দূর্নীতির দায়ে রিমান্ডে সাজা ভোগ করছেন।সাধারণ মানুষের কাছে দলীয় অনেক নেতা কর্মী পরিচয় লাভ করেছেন চিটার, দালাল, বাটপার হিসাবে। বিপরীত ভাবে অনেক ত্যাগী, পরিশ্রমি, কর্মী বান্ধব নেতার ভাগ্য সহায় হয়েছে তাদের সততার কাছে। রাজনীতিকে কেউ কেউ নিয়েছেন ব্যবসা হিসাবে নিজের ও পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষাতে।আবার কেউ কেউ বুক পকেটে অভিমান নিয়ে দিনের পর দিন ছুটে চলেছেন শুধুমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে।বিনিময়ে পেয়েছেন ডজন ডজন মামলা বারবার শিকার হয়েছেন হামলার।ক্ষমতার রাজনীতিতে বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক নেতা।সৃষ্টি হয়েছে শূন্য পদ, আসন।নতুন করে গঠন করা হচ্ছে কমিটি।দেওয়া হচ্ছে উপ-নির্বাচন।সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে বহূল আলোচিত যশোর ০৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসন।
যশোর ০৬ (কেশবপুর) উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলমান।অনেক নেতা মনোনয়নের দাবিদার।নেত্রীর সবুজ সংকেত পেতে দৌড় ঝাঁপ দিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকেই।আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছেন সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন নেতা। দলে দলে বিভক্ত হয়ে ব্যক্তির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা।আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ও আলোচনা সমালোচনায় সর্বত্র শোনা যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শাহিন চাকলাদার, সাবেক সাংসদ ইসমাত আরা সাদেকের কন্যা নওরীন সাদেক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ. এম. আমীর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমীন, বিশিষ্ট সাংবাদিক বাবু শ্যামল সরকার, বিজ্ঞ আইনজীবী হুসাইন মোহাম্মদ ইসলাম, চলচিত্র নির্মাতা ও চিত্র নায়িকা শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদেক,আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রফিক, চিকিৎসক শামছুউজ্জামান।অন্য দিকে জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রার্থী শিল্পপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয় সম্পাদক অর্মলেন্দু দাস অপু। উল্লেখিত মনোনয়ন প্রত্যাশি ব্যতিত আরো মনোনয়ন প্রত্যাশি আছেন যারা নাম প্রকাশ না করে কেন্দ্রে নিয়মিত তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সাধারণ ভোটার বৃন্দ উপ-নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ভাবনা চিন্তা করছেন না।গভীর পরিকল্পনার সাগরে ডুবে আছেন সরকার দলীয় নেতারা।বলা বাহূল্য ২০০৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেন তখন কেশবপুর আসনে নির্বাচন করার মত অনেকে থাকলেও দল মনোনয়ন দিয়েছিলেন শেখ আব্দুল ওহাবকে (আভয়নগর -কেশবপুর) যৌথ আসন করে।দল সরকার গঠন করে উন্নয়নের মূল মন্ত্র নিয়ে।সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেলেও আশানুরুপ উন্নয়ন হয় নি কেশবপুরের।হাতে গোনা কিছু ব্যক্তি রাতারাতি নেতা হয়েছেন। গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়।এরপর টানা দুই বার নির্বাচিত হন মরহুম জননেতা এ. এস.এইচ. কে সাদেক সাহেবের স্ত্রী মরহুমা ইসমাত আরা সাদেক।দীর্ঘ বছর ক্ষমতায় থাকাতে বাড়তে থাকে দলের সিনিয়র নেতা কর্মীদের থেকে দূরত্ব।প্রকাশ্যে চলে কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি।নতুন করে রাজনীতিতে অভিষেক হন অনেক মুখ।চলতে থাকে রাজনীতি, নষ্টরাজনীতি চর্চা।ক্ষমতার রাজনীতিতে অনেকে রাতারাতি শত্রু থেকে মিত্র আবার মিত্র থেকে শত্রুতে পরিণত হয়।নেত্রীর দেওয়া মনোনয়ন নৌকার বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করছি না দেখিয়ে অনারস মার্কা নামক স্বতত্র প্রতিকের ব্যক্তিদেরকে নির্বাচিত করা হয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।কেশবপুর নয় গোটা দেশের মানুষ ২০০৮ এর পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে জানেন।বিরোধীদল নির্বাচনে না আসাতে "যা পেয়েছি তাতে খুশি" ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন অনেক এমপি,মন্ত্রী। স্থানীয় সাংসদদের বিরুধী মনোভাবের কারণে "যা পেয়েছি তাতে খুশি" সমীকরণে জননেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকা প্রতিক বারবার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।এই সব নির্বাচনে নৌকা প্রতিক হেরে যাওয়া মানে তার জনপ্রিয়তা কম ছিলো এমনটা না।বরং মুষ্টিমের কিছু ব্যক্তির সৎইচ্ছার অভাব ছিলো।
বিগত কয়েক বার (যশোর ৩) সংসদীয় নিজ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে গত ১১/০২/২০ তাং এ উপজেলা আওয়ামী লীগ এর এক জরুরী সভায় যশোর ০৬ (কেশবপুর) আসনের একমাত্র উপজেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত নেতা বা প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সুত্রে জানা গেছে। এর ফলে প্রবল ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সভাপতি রুহুল আমীন সহ আরো অনেককে।তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ. এম. আমীর হোসেন এর পক্ষ থেকে নির্বাচনে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায় নি। এ দিকে বিশিষ্ট সাংবাদিক দলের জন্যে মেধা মনন দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাওয়া নেতা বাবু শ্যামল সরকার ও তেমন কিছু জানাচ্ছেন না। অপর দিকে জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না বলে জানা গেছে। দল যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন তবে যাকে মনোনীত করা হবে তার হয়ে কাজ করবেন বলে জানা গেছে।এদিক দিয়ে অনেকেই ধারণা করছেন তাহলে কি শূন্য আসনে বিএনপি নির্বাচিত হতে চলেছে!
কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের ভিতরের ক্ষোভ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলছেন তারা এমন কোনো নেতাকে চান না যে নেতা তাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকবেন না।অতিথি পাখির মত ছুঁটে আসা নেতা নিজের আঁখের গোছাতে আসেন।তারা প্রয়োজন শেষে পাড়ি জমাবেন পূর্বের ঘাটিতে।এই জনপদের মা, মাটি, মানুষের সাথে মিশে থাকা কোনো নেতাকে নেত্রী মনোনয়ন দিলে এলাকাবাসি সেটাকে মাথা পেতে নিবেন এবং তাদের প্রিয় প্রতীক, প্রিয় নেতাকে নির্বাচিত করতে শেষ রক্ত বিন্দু দিতে প্রস্তুত থাকবেন বলে জানা যায়।
এখন দেখার বিষয় জননেত্রী শেখ হাসিনা কি সিদ্ধান্ত নেন।নেত্রী কি এটা মেনে নিবেন যে যার মত করে আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করুক,চলমান দ্বন্ধ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাক নাকি কেশবপুরের রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন, অভিনব ভাবে নবজাগরণ ঘটতে চলেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন