২০ হাজার তরুণীর সর্বনাশ করেও হুঙ্কার!

২০ হাজার তরুণীর সর্বনাশ করেও হুঙ্কার!

বর্তমানে ভার্চুয়াল সন্ত্রাসের ভয়াবহতা সম্মুখ সন্ত্রাসের চাইতেও বেশি। যেটি শেষ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে আপনার নিজের, কিশোর-যুবক ছেলে মেয়ে বা পুরো পরিবারের জীবন। এমনই একটি ভয়ঙ্কর বিষয় আজ আপনাদের সামনে আনতে চাই।

সোশ্যাল মিডিয়া। এটি আজ আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি হিসেবে জীবনে স্থান করে নিয়েছে। গোটা বিশ্বকে আজ সত্যিকার অর্থেই টাচ স্ক্রিনে নিয়ে এসেছে এসব সোশ্যাল মিডিয়া।

তবে সোশাল মিডিয়া কেন্দ্রিক ব্যাক-মেইলিং, যৌনতা, নগ্নতা, খুন, ধর্ষণ, প্রতারণা, অশ্লীলতা, ডিভোর্স, আত্মহত্যা, মূল্যবোধের অবক্ষয় আজ একটি কমন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।

সম্প্রতি অসঙ্গতি টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এমনই এক চক্রের পরিচয়। যারা দেশে বা বিদেশে বসে শুধু মাত্র ফেসবুক হ্যাকিং ও ব্লাকমেইলিংকে পেশা হিসেবে নিয়ে, মাসে কোটি টাকা ইনকাম করছে। এ পর্যন্ত তারা ফাঁসিয়েছে ২০ হাজার তরুণীকে।

আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেন এক তরুণী। এর সপক্ষে আমরা হাতে পাই থানায় অভিযোগের একটি কপি ও জিডি কপি। অভিযোগ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা পেয়ে যায় ভুক্তভোগী আরও কয়েক তরুণীকে। বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। প্রতারণার মাধ্যমে এই গ্রুপ ফাঁসিয়েছে ২০ হাজার তরুণীকে। তার প্রতারণার হাতিয়ার ছিলো প্রেমের ফাঁদে ফেলে পারসোনাল ছবি ভিডিও হাতিয়ে নেয়া, আইডি হ্যাক করা, মডেল বানানো বা চাকরির অফার দিয়ে তরুণীদের আকৃষ্ট করা। এবং পরবর্তীতে তাদের জালে পা দেয়া তরুণীদের ব্লাকমেইল করে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় ছিলও তাদের মূল উদ্দেশ্য। তরুণীদের অভিযোগ ছিলও মীর মাসুদ রানা ওরফে জয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু জয় নামের এই প্রতারক ও তাদের গ্রুপকে চাহিদা মতো বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে যেতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের।

তাদের সকলের অভিযোগ জয় নামের ভার্চুয়াল সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে, যে নাকি টিম সিলেট নামের একটি হ্যাকার গ্রুপের নেতা। এরা এতটাই সুচতুর যে পরিচয় উদ্ধারে আমাদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। উল্টো অসঙ্গতি টিমকেই হুমকি দিয়ে বসে জয়।

জয়ের মাধ্যমে জানা যায় টিম সিলেটের প্রধান হচ্ছেন সিলেটর জন্মগ্রহণকারী নাসির। যে কিনা গত তিন বছর থেকে বসবাস করছে যুক্তরাষ্ট্রে।

এদিকে অসঙ্গতি টিমের অনুসন্ধান চলমান থাকার মধ্যেই হঠাৎ করেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় হ্যাকার জয়ের। কারণ এরই মধ্যে চলচ্চিত্র তারকাদের আইডি হ্যাকিংয়ের অভিযোগে রাবের জালে ধরা পড়ে যায় জয়সহ তার এক সহযোগী। বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

এই চক্র শুধু উঠতি মডেল-অভিনেত্রী বা সাধারণ তরুণীদেরই নয়, তারা মিশা সওদাগর, জায়েদ খাঁন, রিয়াজ, শাহনুর, আঁচল, রেসি, কেয়া, মাহি, বিপাশাসহ বিভিন্ন শিল্পী কলাকুশলীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছে। র‌্যাবের কাছে এমনই তথ্য দিয়েছে মীর মাসুদ রানা ওরফে জয় ও তার সহযোগী সৌরভ। হ্যাক করা আইডি ফেরত দিতে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিত তারা।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সহায়তায় "টিম সিলেট" নামক হ্যাকিং গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে র‌্যাব। এই গ্রুপের হ্যাকাররা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতো। বাংলাদেশে এই চক্রের প্রায় ২০ জন সদস্য রয়েছেন।

এছাড়া দেশের বাইরের রয়েছে তাদের দলনেতা। তাদের মধ্যে হল মীর মাসুদ রানা ওরফে জয়, মো. সৌরভ, বাবলু রহমান, শেখ জাকারিয়া, রাজন, বাবলু রহমান, নাজমুস শাকিব, মোহাম্মদ সোহাগ, আতিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহালম, রেজাসহ কয়েকজন তরুণীর নামও উঠে আসে। তবে তরুণীদের অভিযোগ তাদের নামগুলো জুড়ে দিয়ে ফাঁসিয়েছে জয় ও নাসির।

নাসির নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই দলের মূল হোতা। কিছুদিন আগে সাইবার অপরাধে যুক্ত থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। নাসিরই ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হ্যাকার গ্রুপে যোগদানের জন্য লোক নিয়োগ করতো।

যার বিরুদ্ধে এতো এতো সব অভিযোগ তিনিই টিম সিলেটের প্রধান নাসির। অসঙ্গতি টিম এসব বিষয়ে কথা বলে নাসিরের সঙ্গে। দেখে শুনে কি হচ্ছে হচ্ছে স্যোশাল মিডিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখবেন। না। তার প্রয়োজন পড়বে না। একটু সচেতন হলে, আপনি নিজেই নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন ফেসবুকে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password