ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে কঙ্গোয় শনাক্ত হওয়া 'এমপক্স'। সংক্রামক ও ভাইরাসজনিত রোগটি আফ্রিকা মহাদেশ ছাপিয়ে, এশিয়া ও ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। ঘাতক ভাইরাসে, আক্রান্তের সংখ্যা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে 'জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা' জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-WHO।
এশিয়ায় প্রথম শনাক্ত হলো, সংক্রামকব্যাধী- এমপক্স। ৩ জন রোগী শনাক্তের পর, দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানে চলতি বছর এখন পর্যন্ত তিনজন এমপক্স রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক ব্যক্তির পর আজ শুক্রবার আরও দুই ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। তিনজনই মধ্যপ্রাচ্য থেকে সম্প্রতি পাকিস্তানে ফিরেছেন। এ অবস্থায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করেছে।
দ্য ডন জানায়, এমপক্স শনাক্ত সব রোগী পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের। বৃহস্পতিবার প্রথম এমপক্সের (মাঙ্কিপক্স) রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশটিতে ন্যাশনাল কমান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার (এনসিওসি) এই রোগ মোকাবিলায় কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব বন্দরের কর্মকর্তাদের নজরদারি ব্যবস্থা কঠোর করতে বলা হয়েছে।
বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীর মধ্যে এমপক্সের লক্ষণ দেখা গেলে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির মধ্যে এমপক্সের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাঁরা সবাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে সম্প্রতি পাকিস্তানে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের মধ্যে এমপক্সের কোন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা রাজধানী ইসলামাবাদে পাঠানো হয়েছে। সেখানে জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে ধরনটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া এমপক্স নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত বুধবার বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। পরদিন বৃহস্পতিবার সুইডেনে এমপক্সের রোগী শনাক্ত হয়।
গতকাল সুইডেনের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা সে দেশে প্রথমবারের মতো এমপক্সের রোগী শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। সংস্থাটি বলেছে, এমপক্স শনাক্ত হওয়া ওই ব্যক্তি আফ্রিকার একটি দেশে অবস্থানের সময় এমপক্স ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বর্তমানে এমপক্সের ‘ক্লেড ১’ ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
এ মুহূর্তে এমপক্স ভাইরাসের কয়েকটি ধরনে সংক্রমণের ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি ধরন বেশি বিপজ্জনক। ‘ক্লেড ১বি’ নামের ধরনটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয়েছে। ‘ক্লেড ১’-এর দুটি ধরন রয়েছে। সুইডেনে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি ‘ক্লেড ১বি’ সংক্রমণের শিকার। ধরনটিতে সংক্রমণের প্রথম ঘটনা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় শনাক্ত হয়।
তবে এটির সংক্রমণ এখন বুরুন্ডি, কেনিয়া ও রুয়ান্ডাতেও শনাক্ত হয়েছে। ডব্লিউএইচওর ঘোষণার আগে গত মঙ্গলবার আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) বিজ্ঞানীরা রোগটি নিয়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। সিডিসি বলেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত এমপক্সে ১৪ হাজার ৫০০-এর বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
এতে মারা গেছেন অন্তত ৪৫০ জন। ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় সংক্রমণের এ হার ১৬০ শতাংশের বেশি ও মৃত্যুর হার বেশি ১৯ শতাংশ। এমপক্সে সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এমপক্স ভাইরাস অন্যজনের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এমন সংস্পর্শের মধ্যে রয়েছে শারীরিক সম্পর্ক, ত্বকের স্পর্শ, কাছাকাছি থেকে কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ ফ্লুর মতো।
রোগের একপর্যায়ে শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এমপক্স নিয়ে নিয়ে চীনও সতর্কতা জারি করেছে। দেশটি আজ শুক্রবার থেকে বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রী ও পণ্যে ভালোভাবে পরীক্ষা (স্ক্রিনিং) করবে। আগামী মাস পর্যন্ত এটা চলবে। ডেনমার্কের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ব্যাভারিয়ান নর্ডিক জানিয়েছে, তারা ২০২৫ সালের মধ্যে এমপক্সের এক কোটি টিকা তৈরি করতে প্রস্তুত। ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব ব্যক্তিদের এই টিকা ব্যবহারের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে কোম্পানিটি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন