শরীয়তপুর সদর উপজেলায় জয়ী মেম্বার ও পরাজিত মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ৩ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ, ২০টি বাড়ি ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়েছেন। তাদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুরে উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের খিলগাঁও তেঁতুলিয়া ও সুজনদল গ্রামে। এদিকে আহত হওয়ার পর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের মারপিট করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীসহ রোগীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পালং মডেল থানা ও ডোমসার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জয়ী সদস্য আলী আসগর খান জানান, গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় ভোট গণনা শেষে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদে মোরগ প্রতীক নিয়ে তিনি জয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তালা প্রতীকের আ. মতিন ছৈয়াল পরাজিত হন। ফলাফল ঘোষণার পর থেকে উভয়পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
রোববার জয়ী সদস্য আলী আসগর খান তার সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে দেখা করতে যান। একপর্যায়ে খিলগাঁও তেঁতুলিয়া গ্রামে গেলে পরাজিত মেম্বার মতি ছৈয়ালের সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় দিদার সিকদার (৪০), আবদীন তালুকদার (৩৫), ইমরান তালুকদারসহ অন্তত ১০ জন মারাত্মক আহত হন। আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আবদীন তালুকদারকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে আহত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের শরীয়তপুর হাসপাতাল থেকে মারপিট করে বের করে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন বলে জানান রোগীর স্বজনরা। পরে পুলিশ প্রহরায় আনিস কোতোয়ালকে অন্যত্র চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। খবর পেয়ে জয়ী মেম্বার আলী আসগর খানের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, রামদা, ছেনদা, টেঁটা, বল্লম ও শত শত বোমা নিয়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় গ্রুপে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ করতে থাকে। প্রায় তিন শতাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান। এ সময় বোমা ও অস্ত্রের আঘাতে সুমন দাস (৩০), লিটন সিকদার (৩৫), মাসুদ মাদবর (৩০), জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৪), আনিস কোতোয়াল (৩৬), মনির হোসেন কোতোয়াল (৪০), কবির কোতোয়াল (৪০), পপি আক্তার (৩০), রুবেল কোতোয়াল (৪৮), সফিক মিয়া (৩০), দীন ইসলাম (৩০), হাসেম চৌকিদার (৫০), সেলিম খাঁ (৪৫), সোবহান বেপারী (৩৮), সবুজ মুন্সি (৩২), রেজাউল হক (৪৫), ইমরান (৩২) ও ফয়সাল মুন্সীসহ (২২) ৩০ জন আহত হন।
আহত আনিছ কোতোয়াল বলেন, আমাদের লোকজনকে মারপিট করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি জীবনের নিরাপত্তার জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছি। বিজয়ী প্রার্থী আলী আজগর খান বলেন, আমি বিজয়ী হওয়ার পর মানুষের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মতি ছৈয়াল তার লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। পরে আমার লোকজন নিয়ে আমি তার প্রতিবাদ করি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে রোগীদের মারধর করার কথা অস্বীকার করে পরাজিত মেম্বার ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মতিউর রহমান (মতি ছৈয়াল) বলেন, আমার লোকজনকে তারা বোমা হামলা করে ও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছে। পালং মডেল থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন বলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার এলাকায় দুই মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। হাসপাতালে মারধরের কথা শুনে সেখানে গিয়ে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। একাধিক জায়গায় নির্বাচনী সহিংসতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন