আফগান শিশু নাজিয়ার বয়স চার বছর। বাড়িতে ১৮ মাস বয়সী ভাইয়ের সঙ্গে খেলতে দেখা যাচ্ছিল তাকে। ক্ষুধা মেটানোর অর্থ জোগাতে এই শিশু নাজিয়াকেই আগেভাগে বিয়ের জন্য বিক্রি করে দিয়েছেন তার বাবা হযরতুল্লাত। হযরতুল্লাত বলেন, ‘আমাদের কাছে খাবারের কেনার কোনো পয়সা ছিল না। এ কারণে স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দিই, আমার মেয়েকে বিক্রি করতে চাই। ’ ১৪ বছর বয়সে স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হবে তাকে। মেয়েকে আগাম ‘বিক্রি করে’ দুই দফায় অর্থ পেয়েছেন অসহায় বাবা হযরতুল্লাত।
আফগানিস্তানে এখন চলছে তীব্র খাদ্যসংকট। বহু মানুষের হাতে কোনো কাজ নেই। খাবার জোগানোর অর্থ পেতে অনেক আফগান বাবা শুধু সন্তান বিক্রি করছেন না, কেউ কেউ নিজের শরীরের কিডনির মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যন্ত বিক্রি করছেন। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর দ্বিতীয় শীতকাল পার করতে যাচ্ছে দেশটি। ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে আফগানিস্তানের বিদেশে গচ্ছিত অর্থ জব্দ রয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মুখে। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতের আশপাশের বাসিন্দা আবদুল ওয়াহাব নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা খিদেয় কাঁদে। তারা ঘুমাতে পারে না। ’ হেরাতের অদূরে একটি বস্তি এলাকায় ওয়াহাবের পরিবার বাস করে। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং নানা কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষরা কয়েক দশক ধরে এই বসতি গড়ে তুলেছে। এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবারে গিয়ে দেখা যায়, তারা সকালের দিকে কয়েক টুকরা রুটি খেয়েছে।
রাতের জন্য কয়েক টুকরা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে সেগুলো ফুলে বড় হয়। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ বছর বয়সী এক আফগান যুবক জানান, তিনি নিজের কিডনি বিক্রি করেছেন দুই লাখ ৭০ হাজার আফগানি মুদ্রার বিনিময়ে। খাবার কিনতে গিয়ে পরিবারের যে ঋণ হয়েছিল তা পরিশোধ করতে তিনি ওই অর্থের একটি বড় অংশ কাজে লাগিয়েছেন।
ওই যুবক বলেন, ‘কিডনি বিক্রির পর আমার নিজেকে অর্ধেক মানুষ মনে হচ্ছে। আমি অসহায় বোধ করছি। ’ দুই লাখ ৪০ হাজার আফগানির বিনিময়ে কিডনি বিক্রির পর এক আফগান নারী এখন নিজের দুই বছর বয়সী মেয়েকে বিক্রির কথা চিন্তা করছেন। এর আগে এক লাখ আফগানির বিনিময়ে পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই নারী বলেন, ‘এখন আমি বাধ্য হয়েছি আমাদের দুই বছর বয়সী মেয়েকেও বিক্রি করতে। ’ ঋণের অর্থের বিনিময়ে পাওনাদাররা মেয়েকে চাচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন