সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। এমন অভিযোগ তুলে সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। মারা যাওয়া যুবকের নাম উজির মিয়া (৪০)। তার বাড়ি উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কাঁচা মিয়ার ছেলে। সোমবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান উজির মিয়া।
এর পর দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাগলাবাজার এলাকায় স্থানীয় লোকজন সড়কে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। সেখানে তার লাশ রেখে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
এসময় রাস্তায় নামে স্থানীয় হাজারো মানুষ। মরদেহ সড়কে রেখে সড়ক অবরোধের কারণে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। অবরোধস্থল স্থানীয় পাগলাবাজার এলাকার উভয় পাশে সড়কে দীর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে অবরোধকারীদের শান্ত করতে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ারুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন।
পরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। এসময় ইউএনওর গাড়ি লাশের ওপর দিয়ে চলে গেছে- এমন কথা প্রচার হলে স্থানীয় জনতা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এলাকাবাসী প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামের উজির মিয়াকে থানার এসআই দেবাশীষ, এসআই প্লাটন কুমার সিংহ ও এএসআই আক্তারুজ্জান তাকে নিজ বাড়ি থেকে সন্দেহজনক আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
থানায় নিয়ে তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরের দিন বুধবার তাকে সুনামগঞ্জ আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে গুরুতর আহত উজির মিয়াকে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত উজির মিয়ার ছোট ভাই ডালিম মিয়া জানান, তার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে থানায় নির্যাতন করে। পরদিন তাকে একটি চুরির মামলায় আদালতে পাঠালে জামিনে মুক্ত হন।
এরপর থেকে উজির মিয়া গুরুতর অসুস্থ হন। এ অবস্থায় সোমবার সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। উজির মিয়ার ভাতিজা ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান বলেন, আমার চাচাকে চুরি মামলা দিয়ে আটক করে থানা হাজতে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে শান্তিগঞ্জ থানাকে নির্যাতনের কথা জানাই। তারা বিষয়টি দেখি দেখছি করতে আমার চাচার মৃত্যু হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শান্তিগঞ্জ থানার এসআই দেবাশীষ ও এসআই প্লাটন কুমার সিংহ তার চাচার ওপর অমানবিকভাবে নির্যাতন করেছেন।
চাচা জামিন পেয়ে পরিবারের কাছে পুলিশি নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। উজির মিয়ার পরিবার ও তার স্বজনরা এ ঘটনায় শান্তিগঞ্জ থানার এসআই আলাউদ্দিন, এসআই দেবাশীষ, এসআই প্লাটন কুমার সিংহের বিচারের দাবি জানান। অবরোধ চলাকালে স্থানীয়রা এসব পুলিশ অফিসারদের গ্রেফতারেরও দাবি জানান। অবরোধ-বিক্ষোভের খবর খবর পেয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার-উল-হালিম ঘটনাস্থলে যান। তাদের হস্তক্ষেপে বিকাল ৫টার দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
এদিকে উজির মিয়ার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণের জন্য নেওয়ার সময় তার সুরতহাল সবার সামনে করার দাবি জানান বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে সবার সামনে তার সুরতহাল করা হয় বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উজির মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনে চিহ্ন রয়েছে- যা তারা ভিডিও করে রেখেছেন। এ বিষয়ে শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদীর হোসেনের বক্তব্যের জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ওই ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিচার হবে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শান্তিগঞ্জের ইউএনও আনোয়ারুজ্জামান বলেন, উজির মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম আমি। লোকজন আমার ওপর চড়াও হলে আমি দ্রুত ওখান থেকে চলে আসি। আমার গাড়ি লাশের ওপর দিয়ে আসেনি। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আসামিকে আটক করা হয়েছিল ৯ ফেব্রুয়ারি।
একদিন হাজতে রেখে পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি চলে যান। এরপর কোনো একদিন হয়তো তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শুনেছি আজকে সকালে নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও তাদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে গেছেন। তিনি না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন