নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় নেশার টাকার জন্য ইজিবাইকচালক হাসান আলীকে গলাকেটে হত্যা করেন এখলাছ হোসেন ও তাঁর সহযোগী। পরে তাঁরা হাসানের ইজিবাইকটি ছিনতাই করে সেটি বিক্রির জন্য ওই চক্রের অপর সদস্য উপজেলার বনগ্রাম হঠাৎপাড়া গ্রামের ময়নুল ইসলামকে দেন।
আজ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারী) নওগাঁর পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান মিয়া তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। হাসান আলী হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার মদনচক গ্রাম থেকে এখলাছ হোসেনকে (২১) আটক করে। এর আগে দুপুরে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক বিক্রির কাজে সহযোগিতার অভিযোগে মহাদেবপুর উপজেলার ছাইতলতলী বাজার এলাকা থেকে উপজেলার বনগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক ময়নুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। এখলাছ হোসেনের বাড়ি উপজেলার সফাপুর পূর্বপাড়া গ্রামে। হাসান আলী (১৭) উপজেলার খোদ্দকালনা গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে।
গত শনিবার দুপুরে ভাড়ার উদ্দেশে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে হাসান নিখোঁজ হয়। পর দিন সকাল ৬টার দিকে উপজেলার গোফানগর শাবইল এলাকার একটি ধানখেত থেকে হাসানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন হাসানের বাবা আহাদ আলী বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার পর এ ঘটনার তদন্তের নামে মহাদেবপুর থানা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, হাসান হত্যা মামলার তদন্তে নামার পর গত সোমবার দুপুরে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে মহাদবেপুর থানা পুলিশ জানতে পারে উপজেলার ছাইতনতলী বাজারে রক্তমাখা একটি ইজিবাইকসহ একজন ব্যক্তিকে দেখা গেছে। তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে হাসানের ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকসহ ময়নুল ইসলামকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে ময়নুল পুলিশকে জানান, উপজেলার সফাপুর পূর্বপাড়া গ্রামের এখলাছ হোসেন নামে তাঁর পরিচিত এক তরুণ গত শনিবার রাত ৯টার দিকে ইজিবাইকটি তাঁর কাছে নিয়ে আসে এবং সেটি বিক্রি করে দিতে বলেন। ইজিবাইকটি বিক্রির জন্য রোববার তিনি ছাইতনতলী বাজারে নিয়ে এসেছিলেন। ময়নুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মান্দা উপজেলার মদকচক গ্রাম থেকে হাসান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এখলাসকে রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আটক করে মহাদেবপুর থানা পুলিশ। আটক এখলাছ ও ময়নুলকে হাসান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁদেরকে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হবে এবং আদালতের নির্দেশে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসপি আরও জানান, ১৬১ ধারায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাসান হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি এখলাছ হোসেন হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এখলাছ একজন মাদকসেবী। তাঁর মাদক সেবনের সঙ্গী অপর এক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ইজিবাইক ছিনতাই করে সেটি বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড়ের পরিকল্পনা করেন। ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহাদেবপুরের কুঞ্জবন মোড় থেকে খাজুর বাজারে যাওয়ার কথা বলে হাসানের ইজিবাইক ভাড়া করেন এখলাছ ও তাঁর সহযোগী। খাজুর বাজারে যাওয়ার পর তাঁরা চালককে বলেন ছাইতনতলী হাটে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। ছাইতনতলী যাওয়ার পর তাঁরা বলেন শাবইল মোড়ে পর্যন্ত দিয়ে আসতে। শাবইল মোড়ে পৌঁছানোর পরেই এখলাছ পেছন থেকে হাসানের গলায় ছুড়ি চালিয়ে হত্যা করে। পরে তাঁরা হাসানের লাশ রাস্তার পাশে ধান খেতে ফেলে রেখে ইজিবাইকটি নিয়ে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ গাজিউর রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, সুরাইয়া হোসেন ও এটিএম মাইনুল ইসলাম, মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ, নওগাঁ সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন