আপনি বস। বলছি না, এর মানেই হলো অফিসের সবচেয়ে আরামের চেয়ারটা আপনার দখলে। বসেরও বস আছে! আপনি হয়তো অফিসের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তা নন, কিন্তু আপনার তত্ত্বাবধানে কাজ করে এক দল কর্মী। তাঁদের কাছে ব্যক্তি হিসেবে ‘আপনি’ কেমন? কর্মীরা কি বস হিসেবে আপনাকে পেয়ে খুশি? নাকি মাঝরাতে আপনি তাঁদের দুঃস্বপ্নে হানা দেন? এমনও হতে পারে, এসব প্রশ্ন আপনার কাছে একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। কর্মীরা কে কী ভাবল, তাতে কিছু যায় আসে না।
আপনি বোঝেন কেবল কাজ, ‘ডেডলাইন’, ‘প্রফিট’, ‘পারফরম্যান্স’, ‘উপস্থিতি’...এসব। তাহলে বস, আপনার জন্য দুঃসংবাদ। আপনি ইতিমধ্যেই ‘মন্দ বস’ হয়ে বসে আছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠানের সাফল্য-ব্যর্থতা অনেকখানি নির্ভর করে কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।
ভালো মানুষ মাত্রই ভালো বস, কাজ জানেন মানেই তিনি নেতৃত্ব দিতে জানেন—এমনটা নয়। বিল গেটস একবার মজা করে বলেছিলেন, ‘স্কুলে তোমার শিক্ষককে যদি খিটমিটে মনে হয়, কর্মক্ষেত্রে বসের সঙ্গে দেখা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করো!’ সত্যিই কি তাই? বসের সঙ্গে স্কুলশিক্ষকের মিল খুঁজে পান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক রুবিনা খানও।
বলছিলেন, ‘স্কুলে অনেক টিচার পড়াটা ভালোমতো না বুঝিয়েই বকাঝকা শুরু করতেন। তখন মনে হতো সব যদি বুঝতামই, তবে তো আর স্কুলে পড়তাম না। কর্মক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সে রকম। অনেক বস ভাবেন, কর্মীরাও তাঁর মতো করেই সবটা জানবে, বুঝবে। তিনি জানেন বলেই তিনি অমন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছেন।
কর্মীরা তাঁর মতো বুঝবে না, এটাই তো স্বাভাবিক।’ একটু অন্য দৃষ্টিভঙ্গির কথাও বলছিলেন তিনি। ‘প্রথম দিকে আমার একজন বসকে ভালো মনে হতো না। কিন্তু তাঁর চাপে পড়েই অনেক কাজ শিখেছি। এখন বুঝি, বস হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন।’ বিজনেস ইনসাইডার, টাইম ম্যাগাজিন ও হিউম্যান রিসোর্স ডটকমের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ‘খারাপ বস’-এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। নিজের সঙ্গে একঝলক মিলিয়েই দেখুন!
খারাপ বসের প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তিনি কর্মীদের প্রশংসা করতে জানেন না। উৎসাহ দেওয়াটা তাঁর অভ্যাসে নেই। . প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের কথা বলতে গেলে তিনি ‘আমি’ শব্দটা ব্যবহার করেন। আবার ব্যর্থতার কথা বলতে গেলে ‘আপনাদের’ বা ‘তোমাদের’ ব্যবহার করতে ভুল হয় না। যদি কর্মীকে তাঁর প্রাপ্য কৃতিত্বটুকু দিতে না জানেন, তার মানে বস হিসেবে আপনি কম খারাপ নন! বস সব সময় ঠিক, এমনটা নয়। কর্মীদের মতামতও যৌক্তিক হতে পারে।
সব সময় টেবিলের এক প্রান্তে বসে বস কথা বলবেন আর অন্যরা মাথা দোলাবে, এটাও দুর্বল নেতৃত্বের লক্ষণ। আপনি যদি চান কর্মীরা প্রতি মুহূর্তে আপনার ভয়ে থরকম্প হয়ে থাকুক, তাতে আখেরে কাজেরই ক্ষতি হবে। ‘কর্মীরা আমার মতো করে ভাববে, কাজ করবে, আমার পছন্দটাই পছন্দ করবে, আমার অপছন্দে সায় দেবে’—এমন ভাবাটা মন্দ বসের বৈশিষ্ট্য। ক্রমাগত সিদ্ধান্ত, লক্ষ্য, দৃষ্টিভঙ্গি বদলও কর্মীদের কাছে আপনাকে অজনপ্রিয় করে তুলবে।
আপনি কী চান আর কী চান না, সেটা নির্দিষ্ট করে না বলে শুধু অধস্তন কর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা ভাবা ভুল। একজন খারাপ বস কখনো কর্মীকে ‘বড় হওয়ার’ সুযোগ দেন না। কর্মীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চান না। পরিবার, স্বজনের খোঁজখবর নেন না। পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ খারাপ বসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি অফিসে আত্মীয় কিংবা কাছের মানুষদের অগ্রাধিকার দেন, ভুল করলেও ছাড় দেন।
সব কর্মীর প্রতি তাঁর আচরণ সমান হয় না। অনেকে নারী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে দুর্বল মনে করেন। আবার উল্টোটাও হয়। অনেক পুরুষ বস নারী কর্মীদের প্রতি কিছুটা ‘বাড়তি আগ্রহ’ দেখান। এসবও বসকে অপছন্দ করার কারণ হতে পারে। প্রতিষ্ঠানের বাইরে দেখা হলে এড়িয়ে যাওয়া, প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা না করা, যখন তখন এমনকি ছুটির দিনেও ফোনে তটস্থ রাখা, সব সময় ধমকের ওপর রাখা কিংবা কথার গুরুত্ব না দেওয়া—এসবও মন্দ বসের লক্ষণ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন