প্রায় ১৭ বছর আগে স্ত্রী সানজিদা খানমকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার হন আশরাফ হোসেন (৪৭)। ১২ দিন পর তাকে জামিনে মুক্ত করেন তার শ্বশুর। জামিনে মুক্তি পেয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে আশরাফ আত্মগোপন করেন। কিছুদিন পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আসে সানজিদাকে হত্যা করা হয়েছে।
কিন্তু এরপর স্বামী আশরাফকে আর খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন আশরাফ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকার সাভার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব জানায়, স্ত্রীকে হত্যার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ঢাকার আশুলিয়ায় গিয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহের বাইরে থাকতে একপর্যায়ে তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকায় কাজ নেন।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে তার গ্রেফতারের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র্যাবের পরিচালক বলেন, স্ত্রী সানজিদা খানম হত্যা মামলায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আশরাফকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। কিন্তু তিনি পলাতক ছিলেন। তাকে খুঁজে বের করার জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে র্যাবকে অনুরোধ জানায় সানজিদার পরিবার।
এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আশরাফকে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। আশরাফ একসময় একটি বেসরকারি সিমেন্ট কোম্পানির কারখানায় কাজ করতেন। স্ত্রী সানজিদা ও ১৫ মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে তিনি সিমেন্ট কোম্পানির কোয়ার্টারে থাকতেন। মঈন বলেন, ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে কোয়ার্টারের বাসা থেকে সানজিদার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সানজিদা আত্মহত্যা করেছেন এমন ধারণা থেকে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে আশরাফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১২ দিন পর তাকে জামিনে মুক্ত করেন তার শ্বশুর। জামিনে মুক্তি পেয়ে সন্তানকে নিয়ে তিনি আত্মগোপন করেন। তিন মাস পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সানজিদাকে হত্যা করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে আর খুঁজে বের করতে পারেনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, আত্মগোপনের এক বছর পর ২০০৬ সালে আশরাফ আশুলিয়ায় সাপ্তাহিক মহানগর বার্তা নামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় যোগ দেন। পরিচয় গোপন করে একই বছর তিনি আশুলিয়া এলাকায় বিয়ে করেন। ২০০৯ সালে তিনি আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য হন। ২০১৩-১৪ মেয়াদে তিনি আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক হন।
সর্বশেষ তিনি সাপ্তাহিক স্বদেশ নামের একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিজেকে গোপন করতে এভাবে নানা কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। র্যাব জানায়, শুরুতে তার (আশরাফ) একটি মোবাইল ফোন নম্বর সচল অবস্থায় পাওয়া যায়। নম্বরটির অবস্থান ছিল বরিশালে। সেখানে গিয়ে জানা যায়, এই নম্বরটি এখন আর আশরাফ ব্যবহার করেন না। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি সেটি ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
পরে সোনারগাঁওয়ের যে এলাকায় আশরাফ বসবাস করতেন, সেখানে গিয়ে তার ছবি সংগ্রহ করা হয়। আশরাফের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করতে পারবেন- এমন ব্যক্তি খুঁজে বের করা হয়। আশরাফ নাম লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সার্চ করে বিভিন্ন আইডি পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি আইডি ও একটি পেজে তার ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। পরে এ সংক্রান্ত আরও তথ্য সংগ্রহের পর নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে আশরাফকে গ্রেফতার করা হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন