সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে রাজপথে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা ছাড়া সারাদেশে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি 'গণমিছিল' আজ। দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে এ কর্মসূচি পালন করছে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
তারা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুরের গোহাটা রোডে মিছিল বের করে বিএনপি। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানির বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। এসময় খালেদা জিয়া-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর'সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সারা দেশে বিএনপি গণমিছিল কর্মসূচি পালন করছে। সকাল থেকে ঢাকা মহানগর ও জেলা ছাড়া সারা দেশে গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও যুগ্ম মহাসচিবদের কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে বলা হয়েছে।
সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, মাদারীপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে দলটির নেতাকর্মীরা বিশাল একটি মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি শহরের চৌরাস্তায় অস্থায়ী কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুরান বাজার এলাকার মিলন সিনেমা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
পরে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহানদার আলী জাহান, যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাৎ হাওলাদার, সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ পারভেজ। দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সিগঞ্জেও গণ মিছিল বের করে বিএনপি। তবে সেটি পুলিশের বাঁধায় পণ্ড হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে গণমিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে দলটির নেতা কর্মীরা।
বিষয় নিয়ে পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় একটি গণমিছিল নিয়ে মুক্তারপুর গোসাইবাগ এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে ইউনিয়ন বিএনপির কার্যলয়ে পথসভা করি। পুলিশ বাঁধা দিলেও আমরা আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ফরিদপুরেও বিএনপির গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
তবে, এ গণমিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রায় আধঘণ্টা রাজপথে অবস্থানের পর পুলিশের বাধার মুখে গণমিছিল পণ্ড হয়ে যায়। শনিবার সকাল থেকেই জেলা শহরের কাঠপট্টি সড়কে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়ন করা হয়। এছাড়া ফরিদপুর প্রেসক্লাব, সাবেক মন্ত্রী কামাল ইউসুফের বাড়ির সামনে, কোর্ট চত্বরে ও হাসপাতালের সামনেসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
এ সময় সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়। গণমিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, সরকার পুলিশি বাঁধা দিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ ছোট ছোট আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে। তবে ছোট ছোট আন্দোলনে বাধা দিয়ে সরকার আন্দোলনকে দুর্বার করে তুলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, গণমিছিল আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। যারা বাধা দিচ্ছে আমরা তাদের ধিক্কার জানাই।
এ সময় কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের যুগ্ন সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা, সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন সহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। লালমনিরহাটে ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গণমিছিল করেছে জেলা বিএনপি। দুপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে একটি গণমিছিল বের করে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ, সহযোগি সংগঠন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে গণমিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে মিশন মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সদর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম মমিনুল হক, পৌর বিএনপির সম্পাদক আব্দুস সালাম, জেলা যুবদলের সভাপতি আনিছুর রহমান আনিছ, সম্পাদক হাসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু ইয়াহিয়া ইউনুস, সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, জেলা ছাত্রদল নাজমুর হুদা লিমন ও জাহাঙ্গীর আলম আনন্দ প্রমুখ।
বিএপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে লক্ষ্মীপুরেও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। সকালে মিছিলটি শহরের গোহাটা সড়ক থেকে বের হয়ে বাজার সড়ক প্রদিক্ষণ করে। মিছিল শেষে কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাস ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা হয়।
এতে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান, সদস্য সচিব সাহবুদ্দিন সাবুসহ বিএনপির নেতারা। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও গণমিছিল করেছে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টায় শহেরর সরকারি কলেজ মোড় থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে গণমিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পাওয়ার হাউজ রোড মোড় গিয়ে শেষ হয়।
পরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। ঝিনাইদহে ১০ দফা বাস্তবায়নসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আয়োজনে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মর্ডান মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মশিয়ুর রহমান, বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মুন্সী কামাল আজাদ পান্নু, যুগ্মসম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, সহসভাপতি আক্তারুজ্জামানসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এরআগে সকালে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ গণমিছিল বের করে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, অবাধ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে এ গণমিছিলের আয়োজন করা হয়।
জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসির সভাপতিত্ত্বে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পূর্ব অনুমতি না থাকায় প্রধান সড়কে মিছিল করতে দেওয়া হয়নি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন