কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক ক্রাইমিয়া এবং নিয়ন্ত্রণাধীন ইউক্রেনীয় শহর মারিওপোল সফরে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার গণভোটের মাধ্যমে ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির নবম বর্ষপূর্তি উপলক্ষেই তার এই সফর। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে আইসিজে'র পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরদিনই অঞ্চলগুলো সফর করলেন এ নেতা।
এদিন, ক্রাইমিয়ার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সাক্ষাৎ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পরিদর্শনে করেন আর্ট স্কুল এবং চিলড্রেন সেন্টার। ক্রাইমিয়ার আনুষ্ঠানিকতা যান রুশ নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিওপোলে। হেলিকপ্টার যোগে সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন তিনি। সফর করে শহরের বেশ কিছু এলাকা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছর ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো নতুন দখলকৃত অঞ্চলে এক প্রকাশ্য সফরে গেছেন। তিনি ইউক্রেনের বিধ্বস্ত শহর মারিউপোল পরিদর্শন করেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে মারিউপোলে বোমা বর্ষণের পর রুশ সৈন্যরা গত মে মাসে শহরটি দখল করেছিল।
সংবাদদাতারা বলছেন, মারিউপোল মস্কোর সরকারের জন্য একটি বিরল সামরিক সাফল্যের প্রতীক এবং রুশ নেতার এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে যে তারা সফল হচ্ছে তা সবাইকে দেখানো। এদিকে গত শুক্রবার দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলিরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছেন।
বিবিসির কূটনৈতিক বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস ল্যান্ডল বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন দৃশ্যত মনে হচ্ছে অধিকৃত ইউক্রেনে বর্ধিত সফর করছেন। গতকাল শনিবার তিনি ক্রিমিয়া সফর করেছেন, রাতের বেলা সফর করেছেন মারিউপোল শহর। মারিউপোল দক্ষিণ দনবাস অঞ্চলের একটি শিল্প বন্দর শহর। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে শহরটি ছিল ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের প্রতীক।
এই শহরের অ্যাজভস্টাল স্টিল প্লান্টে ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ বাহিনী কয়েক মাস ধরে রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। রুশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পুতিন হেলিকপ্টারে চড়ে ওই শহরে গিয়ে নামেন এবং অন্ধকারের মধ্যে গাড়িতে শহরটির বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। তিনি শহরের কিছু বাসিন্দার সঙ্গে কথাও বলেন। মারিউপোল একই সঙ্গে কথিত যুদ্ধাপরাধেরও একটি অকুস্থল, যেখানে রুশ বাহিনী একটি প্রসূতি হাসপাতাল এবং একটি থিয়েটার, যেখানে বেসামরিক লোকজন আশ্রয় নিচ্ছিল, তার ওপর বোমা বর্ষণ করেছিল।
রুশ নিউজ চ্যানেল রোসিয়া-২৪ ক্রেমলিনের প্রেস-সার্ভিসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মারিউপোল সফরের সময় পুতিনের সঙ্গে ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন, যিনি তাকে শহরের পুনর্নির্মাণ সম্পর্কে অবহিত করেন। এই সফরের সময় পুতিন স্থানীয় এক পরিবারের আমন্ত্রণে তাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তবে টিভি প্রতিবেদনে পরিবারটির সঙ্গে দেখা করার ওপর কোনো ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি।
বিবিসির মনিটরিং বিভাগ জানিয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন একই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ার রস্টভ-অন-ডন শহরে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ কমান্ড পোস্টে একটি বৈঠকও করেন। সেখানে রুশ সশস্ত্র বাহিনীর স্টাফ প্রধান ও ইউক্রেনে রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভসহ রুশ সামরিক কমান্ডাররা পুতিনকে তাদের সামরিক অভিযানের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, জেনারেল গেরাসিমভ এবং পুতিন একসঙ্গে একটি সিঁড়ি বেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং জেনারেল প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করছেন তার হাতে কতটা সময় আছে। এর জবাবে পুতিন বলেন, ‘যতটা প্রয়োজন ততটা।’ ক্রিমিয়া দখলের নবম বার্ষিকীতে ভ্লাদিমির পুতিন রুশ অধিকৃত ওই ভূখণ্ড সফর করলেন। এর পরই তিনি মারিউপোল যান।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন