আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর উত্তরের সমতল ভূমির নওগাঁর আদিবাসীরা এই কারাম উৎসব পালন করে আসছে ।
সোমবার রাত হতে শুরু হয়ে দিনব্যাপী জেলার পত্নীতলা উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে এ উৎসব পালিত হয়। এ উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সহ জেলা ও জেলার বাহির থেকে আগত আদিবাসী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দিয়ে তাদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলা আদিবাসী নেতৃবৃন্দের আয়োজনে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে পত্নীতলা উপজেলা কারাম উৎসব ও আদিবাসী সংস্কৃতিক মিলন মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও পত্নীতলা উপজেলা খ্রীষ্টান উপাসনা কমিটির সভাপতি, মিঃ জতিন টপ্য এর সভাপতিত্বে ও উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পত্নীতলা উপজেলা খ্রিষ্টান উপাসনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক,মিঃ আনন্দ হেববম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মিঃ ডেভিড হেমব্রম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পত্নীতলা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও রুমানা আফরোজ, নজিপুর পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বাবু, সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজিজুল কবির পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব । মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজাতুল কোবরা মুক্তা, জেলা পরিষদের সদস্য আজাদ রহমান, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ( প্রকল্প) অফিসার, জনাব মোঃ শোয়েব খান উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দিলিপ চৌহান প্রমূখ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চাঁদ পুকুর ধর্ম পল্লীর পাল পুরোহিত, ফাদার বেলিসারিও সিরো মন্তোয়া, বড়দা,সাধারণ সম্পাদক, মিঃ বৈদ্যনাথ টপ্য, প্রধান আলোচক: কারাম উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধক্ষ্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পত্নীতলা উপজেলা শাখার সদস্য, মিঃ সুধীর তিকী। আলোচক: উপজেলা পারগান কমিটির, সাধারণ সম্পাদক ও পত্নীতলা উপজেলা খ্রীষ্টান উপাসনা কমিটির সহ-সভাপতি,বাবু জোসেফ হেবব্রম।জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, মি: নরেন চন্দ্র পাহাম, সহ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের আদিবাসী নেতৃবৃন্দ প্রমূখ। অনুষ্ঠানে প্রায় ২৫ টি দল নাচ গান পরিবেশন করে নিজস্ব কৃষ্টি কালচার তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আদিবাসী সাংস্কৃতির বিভন্ন স্টল পরিদর্শন ও নাচ গান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে প্রায় ২৫ টি দল নাচ গান পরিবেশন করে নিজস্ব কৃষ্টি কালচার তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আদিবাসী সাংস্কৃতির বিভন্ন স্টল পরিদর্শন ও নাচ গান উপভোগ করেন। কারাম একটি গাছের নাম। আদিবাসী বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বংশপরমপরায় ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় পালন করা হয় এই পূজা। এই উৎসবকে ঘিরে মূখরিত হয়ে নওগাঁর আদিবাসি বসবাসরত এলাকাগুলো। পূজার সময় আদিবাসিদের সহদ্বয় দুই ভাই ধর্মা ও কর্মা’র জীবনী তুলে ধরেন তাদের ধর্মগুরু। আদিবাসি বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সকল বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন করায় তার ক্ষতি হয়। ভাদ্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় আদিবাসি সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। এরপর সন্ধ্যায় পুঞ্জিগা মতে পূর্ণিমা শুরু হলে কারামডাল কেটে অস্থায়ী মন্ডবে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর কারাম এ উৎসব পালন করে।
এ সময় পুরো এলাকা আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায় হয়ে উঠে মিলন মেলা। পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুকুরে জল বিসর্জন দেয়। আদিবাসিরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এ উৎসবে জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন। আদিবাসী নেতৃবৃন্দ বলেন এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আদিবাসিদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সারাদেশে আদিবাসিদের উপর অত্যাচার, উৎচ্ছেদ, নির্যাতন ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সঙ্গবদ্ধ করা।
আদিবাসীদের ভাষা ও সংষ্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা রক্ষার্থে সরকারি ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন মনে করেন। প্রতি বছরই কারাম উৎসব করা হয়ে থাকে। এ উৎসবে সহদ্বর দুই ভাই ধর্মা ও কর্মা’র জীবনী তুলে ধরা হয়। এতে করে আমাদের সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়ে যায়। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা হয়। এই বিশ্বাস থেকে বংশপরমপরায় এই কারাম ডাল পূজা করে আসা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন