আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপ থেকে এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘সিত্রাং’। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এ বিষয়ে বলেছেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায় একযোগে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তিনি বলেন, ‘এখন যে পূর্বাভাস আছে ১৯টি (উপকূলীয়) জেলাই ঝুঁকিপূর্ণ। গত তিন বছরে যে ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়েছে তার চেয়ে এটির আঘাত হানার এলাকা অনেক বেশি।’ সচিবালয়ে আজ রোববার (২৩ অক্টোবর) ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং ইস্যুতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী এর অবস্থান হলো ৮৮.৫ দ্রাঘিমাংশ এবং ১৬ অক্ষাংশ। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এটি ৮৭ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ এবং ১৭ ডিগ্রি অক্ষাংশের সংযোগস্থলে পৌঁছার পর সরাসরি উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিতে পারে। যদি উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেয় করে তাহলে যে গতিপথ দেখানো হয়েছে এটি একেবারে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা উপকূলের সব (১৯টি) জেলায় আঘাত হানতে পারে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গভীর নিম্নচাপটির বর্ধিতাংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরােজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভােলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নােয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৩-০৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে— পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় এটি রোববার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘনীভূত ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে প্রাথমিকভাবে দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানলে দেশের উপকূলের ৭৩০ কিলোমিটার এলাকায় এর প্রভাব থাকবে। কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে গভীর নিম্নচাপটি দ্রুত এগোচ্ছে। এটি কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন