নওগাঁর মান্দায় মাঘের শেষ সপ্তাহের বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে কৃষকেরা

নওগাঁর মান্দায় মাঘের শেষ সপ্তাহের বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে কৃষকেরা

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকার রোপণকৃত বোরো ধান। ক্ষতির মুখে পড়েছে আলু, পেঁয়াজ, সরিষাসহ রবিশস্যের খেত। আকস্মিক বৃষ্টিতে কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ইটভাটা মালিকদের।

বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরে লঘুচাপের কারণে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। শুক্রবার দিনভর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। জেলার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। কৃষকের বলছেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে নিচু এলাকার সদ্য রোপনকৃত বোরো ধানের চারা তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে অনেক বীজতলা। দু’একদিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে রোপনকৃত জমির চারা পচে নষ্ট হয়ে যাবে। নতুন করে ওইসব জমিতে আবারো চারা রোপন করতে হবে। এতে চারার সংকট দেখা দিবে। চারা না পেলে নষ্ট হওয়া জমিতে দ্বিতীয়বার ধান রোপন করা সম্ভব হবে না। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন তাঁরা।

অন্যদিকে ইটভাটার মালিকেরা বলছেন, অসময়ের হঠাৎ বৃষ্টিতে ভাটার খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট গলে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন ভাটা মালিকেরা। উপজেলার পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক মনসুর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে তাঁর ৪০ কেজির ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। পানি সরে না গেলে বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে চারার সংকট দেখা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে তাঁর রোপনকৃত দুই বিঘা জমির ধানও তুলিয়ে গেছে পানিতে। চলতি মৌসুমে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন উপজেলার নলতৈড় গ্রামের কৃষক আবুল কালাম। তিনি বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে তাঁর পেঁয়াজের জমিগুলোতে পানি আটকে গেছে। পানি সরে না গেছে পেঁয়াজের চারা পচে নষ্ট হবে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পগবেন তিনি।

ভাটামালিক খলিলুর রহমান বলেন, মাঘ মাসের শুরুতে একদফা বৃষ্টিতে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এবারের বৃষ্টিতে রোদে শুকাতে দেওয়া কাঁচা ইটগুলো আবারো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে শুকানো সারিবদ্ধ করে রাখা ইটগুলোও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এবারও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি। আজ শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রবিশস্যের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে কপি, আলু, পেঁয়াজ, সরিষাসহ নানা ধরণের সবজির খেতে পানি থইথই করছে। চড়া দামে সার ও বীজ কিনে তাঁরা চাষবাদ করেছেন। কিন্তু শীতকালের হঠাৎ বৃষ্টি তাঁদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘যেহেতু বৃষ্টি থেমে গেছে। শনিবারে রোদের দেখা মিলেছে। সেহেতু রবিশস্যের খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। কৃষকদের জমি থেকে পানি সরানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বোরো ধানের মাঠে যেখানে পানি জমেছে সেগুলোতে ছত্রাক দেখা দিতে পারে। তবে পানি সরানো গেলে সমস্যা হবে না।’

বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুর রহমান বলেন, সাগরে লঘুচাপের কারণে বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টি হয়। এছাড়া শুক্রবার সারাদিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৪৪ মিলিমিটার।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password