ছাতকে স্কুল গেটে লেখা প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে বিরোধ

ছাতকে স্কুল গেটে লেখা প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে বিরোধ

ছাতকের বুরাইয়া হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রায় দু’যুগ এবং স্কুল গেট প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪ বছর পর প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে লেখা প্রতিষ্ঠাতার নামকরণ নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর মতামত ও বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রারে রেজুলেশন করে প্রতিষ্ঠাতার নাম ফটকে লেখা হলেও বর্তমানে এলাকার একটি অংশ তা মেনে নিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে গেট নির্মাণের ৩ বছর ১০ মাস পর গেটে লিখা প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে আপত্তি তুলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী। তবে এ বিষয়ে মতবিরোধ চললেও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন সিংহভাগ দাতা সদস্য। আবার এ বিষয়টিকে নিয়ে  বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঠিক তথ্য বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও দাবী করছেন তারা। জানা যায়, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের অনুন্নত বুরাইয়া এলাকার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহনের সহজ সুবিধার জন্য স্থানীয় বসুন্ধরা সমাজকল্যান সংস্থার উদ্যোগে ১১৬ শতক ভুমি নিয়ে ১৯৯৫ সালে বুরাইয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় বুরাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়। গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মানিক মিয়া ও স্থানীয় ৬৬ জন ব্যক্তির আর্থিক অনুদানে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন এলাকার আলোকবর্তিকা হিসেবে আলো ছড়াচ্ছে। এলাকার ১৫ জন ব্যক্তির দানকৃত ভুমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ বিদ্যাপীট। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রবাসী মানিক মিয়া সিংহভাগ অর্থ ও ভুমি দান করায় তাকে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনোনীত করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয়ে আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রতিষ্ঠা লগ্নে বিদ্যালয়ের বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ৫ লাখ এবং শিক্ষক বেতনের জন্য আরো ৩ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করায় মানিক মিয়াকে এ সম্মানে ভুষিত করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। একই সালের ২৬ জুন স্থানীয় আজমান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিদ্যালয়ের নামকরন ও প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে ঝামেলা এড়ানোর জন্য একটি গেট নির্মাণ এবং গেটে বিদ্যালয়ের নাম, প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মানিক মিয়ার নাম ও সৌজন্যে বসুন্ধরা সমাজকল্যান সস্থার নাম লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রবাসী মানিক মিয়া বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষকের বেতনের জন্য কয়েক দফায় ২১ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২০১০ সালে এ বিদ্যাপীট স্কুল অ্যান্ড কলেজে রূপান্তরিত হয়। এখন পর্যন্ত সরকারী অনুদান বলতে বিদ্যালয়ে দু’তলা বিশিষ্ট একটি ভবন ছাড়া সবই প্রবাসী মানিক মিয়া ও স্থানীয়দের অবদান। প্রস্তাব অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রবাসী মানিক মিয়া। ওইদিন স্থানীয় রইছ আলীর সভাপতিত্বে কলেজে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি গেট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য আরো আট লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষনা করেন। গেট নির্মাণের ৩ বছর ১০ মাস পর গেটে লিখা প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে আপত্তি তুলে দাতাদের একটি অংশ। এব্যাপারে একটি অভিযোগও দেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে। বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি আব্দুল মালিক, দাতা সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সদস্য রফিক উদ্দিন মেম্বার, আছকির মিয়াসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, গেট নির্মাণ ও গেটে প্রতিষ্ঠাতার নাম লেখার বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমেই হয়েছে। যা বিদ্যালয়ের রেজুলেশন খাতায়  লিপিবদ্ধ আছে। সু-বিশাল এ গেট গোপনে রাতারাতি তৈরী করা হয়নি। বিদ্যালয়ের এ গেটটি নির্মাণ করতে প্রায় এক মাস সময় লেগেছে। আপত্তি ও সম্মতি না থাকলে গেট নির্মাণ সম্ভব হতো না। গেট নির্মাণের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর এ ধরনের আপত্তি করার বিষয়টি অযৌক্তিক। এতে ভালো কাজে প্রবাসীরা আগ্রহ হারাবে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম আলোচনা ও রেজিষ্ট্রি খাতায় রেজুলেশন করে করা হয়েছে। যা এখনও রেজুলেশন খাতায় লিপিবদ্ধ আছে। ২০০৮ সালের ৫ জুন রাতে বিদ্যালয়ে চুরি সংঘটিত হয়েছিল। ওই সময মালামালের সহিত অনেক কাগজপত্রও খোয়া গেছে। এ বিষয়টিও ৮ জুন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষতে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পুলিন চন্দ্র রায় জানান, অভিযোগের আলোকে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন ও তদন্ত করে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password