না ফেরার দেশে চলে গেলেন নারী পেপার বিক্রেতা খুকি

না ফেরার দেশে চলে গেলেন নারী পেপার বিক্রেতা খুকি

রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকায় অবস্থিত মাদার তেরেসা হোমসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নারী পেপার বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান বলে জানা যায়। রাজশাহীতে বসবাসকারী প্রায় সকলেই চেনেন এই নারী পেপার বিক্রেতা খুকিকে। তিনি রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পত্রিকা পৌঁছে দিতেন নগরীর অলিতে-গলিতে। তবে তার কাছে পত্রিকা না কিনে কেউ তাকে খুশি হয়ে টাকা দিতে চাইলেও তিনি কখনোই সে টাকা নিতো না। পত্রিকা বেঁচে তার দৈনিক আয় হতো প্রায় ৩০০ টাকা।

তবে একজন নিম্ন আয়ের পেপার বিক্রেতা খুকির কার্যক্রমে সকলের কাছে প্রশংসনীয় ছিলেন তিনি। তার এই ৩০০ টাকা আয়ের থেকে তিনি প্রতিদিন নিজের জন্য ৪০ টাকা, এতিমখানায় ১০০ টাকা, মসজিদ ও মন্দিরে ৫০ টাকা, ভিক্ষুকদের ১০ টাকা এবং তিনি হজ্বে যাওয়ার জন্য ১০০ টাকা করে জমিয়ে রাখতেন বলে শোনা গেছে।

এছাড়াও তিনি অসহায় গরিব ৬ জন মহিলাকে করে খাওয়ার জন্য ৬টি সেলাই মেসিন ও বিধবা ৩ জন মহিলাকে গাভীন গরুও দিয়েছেন। হকারি করা এই খুকির ভালোবাসায় শিক্ত ছিলেন নগরবাসী। কিশোরী থাকা অবস্থায় ৭০ বছরের বৃদ্ধের সাথে বিয়ে হয়েছিল এই খুকির। কিন্তু ভাগ্যের কি নিলাখেলা মাসখানেক মধ্যেই খুকিকে বিধবা করে তিনিও চলে যান না ফেরার দেশে। তার পরে শ্বশুর বাড়ির ভাতও আর খাওয়া হয়নি তার। পরে ভাইদের আপত্তি থাকায় নিজের বাবার বাড়িতেও জায়গা হয়নি এই হকার খুকির।

এই কষ্ট বুকে চেপে রাখতে কিছুটা পাগলাটে হয়ে যায় এই নারী হকার খুকি। একদিন রাস্তায় একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে সেই মানিব্যাগের মালিককে সেটি ফিরিয়ে দিলে মানিব্যাগের মালিক খুশি হয়ে তাকে ১৫০ টাকা উপহার দেন। সে-সময় ১৫০ টাকা মানে বিশাল কিছু। খুকি আর কোন দিকে না তাকিয়ে সেই উপহারের ১৫০ টাকা নিয়ে শুরু করলো পেপার বেচা। পাগলাটে হয়েও স্বাবলম্বী হওয়ার বাসনা বুকে নিয়ে যে নারীর দিনরাত ছুটে চলা সে নারী এখন ছবি হয়ে চির-বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

গত বছরের ডিসেম্বরে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় খবরের কাগজ বিক্রি করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন খুকি। অসুস্থ অবস্থায় দ্রুত রাস্তা থেকে এক পুলিশ কনস্টেবল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর থেকে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password