কুকুর লেলিয়ে হিমাদ্রীকে হত্যা : তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল

কুকুর লেলিয়ে হিমাদ্রীকে হত্যা : তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল

এক দশক আগে, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে শিক্ষার্থী হিমাদ্রী মজুমদার হিমুকে হত্যা করা হয়। এ হত্যার দায়ে পাঁচ আসামির মধ্যে জাহিদুল ইসলাম শাওন, জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ ও মাহবুব আলী ড্যানির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে শাওন জামিন নিয়ে ও রিয়াদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও আসামিদের আপিল-জেল আপিলের শুনানির পর আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা আসামিদের ক্ষেত্রে ডেথ রেফারেন্সের অনুমোদন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর বিচারিক আদালতে দণ্ডের বিরুদ্ধে বাবা শাহ সেলিম টিপু ও শাহাদাত হোসেন সাজুর আপিল, জেল আপিল গ্রহণ করে তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।

আদালতে ডেথ রেফারেন্সের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুনুর রশিদ। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ হিরো, মিজানুর রহমান খান, আলতাফ আহমেদ আমানি ও হুমায়ুন কবির। আসামি পক্ষে শুনানি করেন মো. আহসানউল্লাহ, মো. কামাল পারভেজ, আব্দুল মতিন মণ্ডল, মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার, মোহাম্মদ তাহমিদুস সারওয়ার ও কামরুল ইসলাম।

পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নারগিস আক্তার। রায়ের পর জাহিদ আহমেদ হিরো রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, “শিকড় নামে একটি মাদকবিরোধী সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল হিমাদ্রী। এ রকম একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে হিমাদ্রী কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড চালাত। সে একজন কোমলমতি শিক্ষার্থী ছিল। তার এই সামাজিক কল্যাণমূলক কাজকে ভালোভাবে নেয়নি প্রভাবশালী মহল।

যে কারণে হিমাদ্রীসহ সংগঠনের অনেকেই হুমকিও পেয়েছে। হুমকি পাওয়া অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। তার পরও প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি হিমাদ্রী। ” জাহিদ আহমদ বলেন, ‘আসামিরা রোটেলার নামে পরিচিত পৃথিবীর দ্বিতীয় হিংস্র কুকুর লেলিয়ে হিমাদ্রীকে নির্যাতন করার পর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করে। রায়ে বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণে অপরাধ সংঘটনের সময় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত সাজু ও টিপুর উপস্থিতি ছিল না বলে প্রতীয়মান হওয়ায় হাইকোর্ট তাদের খালাস দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষ এ খালাসের বিরুদ্ধে আপিলে যাবে বলে জানান এই আইন কর্মকর্তা। ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল বন্দরনগরীর পাঁচলাইশ এলাকার সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে হিমুকে ধরে নিয়ে যায় আসামি শাওন, রিয়াদ, সাজু ও ড্যানি। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য ‘এ’ লেভেল পাস করা হিমুর বয়স তখন ১৮ বছর। আসামিরা তাকে ধরে পাঁচলাইশ এলাকায় রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী টিপুর বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে মারধরের পর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয় ছাদ থেকে।

হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছরের ২৩ মে মৃত্যু হয় হিমুর। হিমু খুনের ঘটনায় তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় এই হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পাঁচ আসামির বিচার শুরু করেন আদালত।

১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট পাঁচ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম। সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন- জাহিদুর রহমান শাওন, জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, তার বাবা শাহ সেলিম টিপু, শাহাদাত হোসেন সাজু ও মাহবুব আলী ড্যানি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password