সাহিত্যিক সাংবাদিক রাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞ হিসেবে পরিচিত আবুল মনসুর আহমেদ। তিনি বিভাগ পূর্ব বাংলার একজন অভিভাবক ও সুযোগ্য পুরুষ ছিলেন। আর রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী। পাকিস্তান আন্দোলনের একজন প্রধান সংস্কৃতিক তাত্ত্বিক। পূর্ব বাংলা বাঙালি মুসলমানদের ভাষার সাহিত্য সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রে আবুল মসুর আহমেদ ছিলেন বিশ্বাসী। সেই সাথে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক সমর্থক।
তিনি চেয়েছিলেন লিগ এগেনেস্ট মরলেইজম সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি এই সমাজকে হাত থেকে রক্ষা করে প্রগতিশীলতার পথে আনতে পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির মতো সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং সেই সাথে বাঙালি মুসলমানের সক্রিয়তা রক্ষা করার জন্য সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার দাবিও তিনি তুলেছিলেন। আর এই সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল তার সাহসিকতা ও সাংবাদিকতা।
প্রথম একশো বছর ব্রিটিশ শাসনে মুসলমানদের ভূমিকা ছিল মূলত ব্রিটিশ বিরোধিতা এবং সেই সাথে মুল ইসলাম এর প্রত্যাবর্তনের নামে বিভিন্ন ধর্ম আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টতা। উনিশ শতকের শেষের দিকে এসে কিছু কিছু মুসলিম নেতার প্রচেষ্টায় মুসলমানদের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ব্রিটিশ সহযোগী মনোভাব রূপান্তরিত হয় এবং রাজনীতি অর্থনীতি শিক্ষা সংস্কৃতি সাহিত্যে তাদের মধ্যে একটা জাগরণের সৃষ্টি করা হয়। আর এই জাগরণের কার্যক্রম চলে বিশ শতকে প্রথমার্ধ পর্যন্ত।
এই জাগরণের একমাত্র প্রাণশক্তি ছিল সংবাদপত্র। সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক জগতে আবির্ভাব ঘটে আবুল মনসুর আহমেদের।
আবুল মনসুর আহমেদ শুধু লেখক রাজনীতি কিংবা দক্ষ সাংবাদিক নয় সমাজ সংস্কারক। বাঙালির অধিকার আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলন পাকিস্তানি আন্দোলনসহ এ দেশে অর্ধশতাবদি ধরে সকল আন্দোলনে আবুল মনসুর আহমেদের বিশেষ ভূমিকা ছিল কখনো সক্রিয় কর্মীর কখনো সুদক্ষ নেতা কখনো বা পরামর্শ হিসেবে।
তাছাড়া সেই দিক থেকে আবুল মসুর হামিদের সব লেখাই তার রাজনৈতিক ক্রিয়া কলা এবং মতাদর্শের একটা অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। তার জীবনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ শাসনের শেষ উত্তাল সময়, পাকিস্তান আমলের সম্পূর্ণ অংশ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় একটি বিশেষ কিছু অংশ। ইতিহাসের এই তিন কালকে আবুল মনসুর আহমেদ অত্যন্ত নিখুঁত এবং ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। অন্যদিকে নিজেকে একজন প্রগতিশীল উদার মানসিকতায় রূপান্তর করেছেন শতকের জন্য একটি অসামান্য উদাহরণ।
তিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন এবং ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক পাস করেন। এই সময়টা ছিল খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের। তিনি ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন চর্চা করেন। তারপর কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন। তিনি বিশিষ্ট আইনজীবীও ছিলেন।
গোঁড়া মোহাম্মদী পরিবারের সন্তান ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। লাল তুর্কি টুপি মাথায় মোহাম্মদীর পক্ষে তর্কেও যেতেন। ঘটনাক্রমে একদিন তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের হেড মৌলভী আলী নেওয়াজ ও শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল মজিদের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের সাহচর্যে আবুল মনসুর প্রথম উদারতার পাঠ গ্রহণ করেন। তার এই উদারতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি। ১৯১৮-১৯ সাল থেকে তিনি কবর পূজা এবং পীর পূজাসহ হিন্দু-মুসলিম সমাজের সকল কুসংস্কারের সরাসরি বিরোধিতা শুরু করেন (আত্মকথা, পৃ ১৮০-৮১)।
তিনি সাংবাদিক হিসেবে নানান সংবাদপত্রে কাজ করেছেন, যেমন:ইত্তেহাদ, সুলতান, মোহাম্মদী, নাভায়ু। ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি।আবুল মনসুর আহমদ চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে অবিরাম প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রুপাত্মক রচয়িতা আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক। অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘ইত্তেহাদ’ ‘কৃষক’ ও ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন আধুনিক ও প্রগতিশীল সাংবাদিকতার এক অগ্রপথিক। সফল রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের যুক্তফ্রন্ট সরকারে প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগ সরকারে ছিলেন কেন্দ্র বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী। পূর্ববাংলার স্বার্থের সপক্ষে শক্ত অবস্থান ও নানাবিধ উদ্যোগের জন্য, বিশেষ করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।
সাংবাদিকতা’ -বিশ্বজুড়ে ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক অর্থে ব্যবহৃত একটি শব্দ। মূলত, সাম্প্রতিক ঘটনার ওপর তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, পত্রিকায় ও ম্যাগাজিনে লেখা অথবা রেডিও, টেলিভিশনে সংবাদ সম্পাদনা করা ও প্রকাশ করার নামই সাংবাদিকতা। তবে, ব্যাপক অর্থে বিজ্ঞাপন এবং জনসংযোগ কর্মী ও গণযোগাযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাজীবী ব্যক্তিদের কাজকেও সাংবাদিকতার সংজ্ঞাভুক্ত করা যায়।
বর্তমান যুগে সাংবাদিকতার ব্যাপ্তি ও প্রভাব বিস্ময়করভাবে বিস্তৃত। মিডিয়া বা সংবাদপত্র আজ কেবলই ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প নয়, মিডিয়া আজ অসীমান্তিক-আন্তর্জাতিক, যা সব জাতি, সমাজ ও বিশ্বপরিমণ্ডলকে প্রকাশ করে, অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে। এই কিছুকাল আগেও সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের প্রকাশনা ছিল ছাপাখানাকেন্দ্রিক; আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতিতে সে ব্যাপ্তি আজ রাষ্ট্রের সীমানাই কেবল ছাড়েনি-সম্প্রসারিত হয়েছে অভূতপূর্ব; যুগের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়েছে গোলার্ধের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দৈনিক ও সাপ্তাহিকের ‘অনলাইন এডিশন’ আজ এমন নতুন সংযোজন, যা গণমাধ্যমের পাঠকসংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।
এ ছাড়া সংযোজিত হয়েছে স্যাটেলাইট টিভি, অনলাইন টিভি, এফএম রেডিও, কমিউনিটি ও সিটিজেন রেডিও এবং ব্লগ, যা গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে, একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের পূর্বেকার নিয়ন্ত্রণ ও কণ্ঠ রোধের পুরোনো মানসিকতাগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসার প্রমাণিত করেছে। মোটকথা, উগ্র-ধর্মকেন্দ্রিক বা অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতন্ত্রী কিছু রাষ্ট্র ও অঞ্চল বাদে সংবাদমাধ্যম আজ সার্বিকভাবে পূর্বেকার যে কোনো সময়ের চেয়ে স্বাধীনতামুখী এবং সার্বভৌমত্ব প্রত্যাশী, যা এক তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি।তবে, ঘটনার যথোপযুক্ত বিবরণ প্রদান এবং তথ্য যোগান প্রথা বাংলা ও ভারতের অন্যান্য অংশে প্রাচীন এবং মধ্যযুগেও সীমিতভাবে চালু ছিল। প্রাচীন ভারতে পাথর বা স্তম্ভে খোদিত শব্দাবলি তথ্যের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সম্রাট অশোক পাথর ও স্তম্ভে খোদিত আদেশ তাঁর সাম্রাজ্যের সর্বত্র এবং বাইরেও প্রজ্ঞাপন করেন। তিনি তথ্য সংগ্রহের জন্য দেশে এবং বিদেশে গুপ্তচর নিয়োগ করেন।
সুলতানি আমলে ‘বারিদ-ই-মামালিক’ বা গোয়েন্দা প্রধান কর্তৃপক্ষকে সাম্রাজ্যের তথ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব পালন করতেন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মুনহি বা গুপ্তচররা সুলতানকে অতি তুচ্ছ বিষয়সমূহও অবহিত করত। মোগল শাসনামলে সংবাদ সার্ভিস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ওয়াকই-নবিশ’, ‘সাওয়ানিহ-নবিশ’ এবং ‘খুফিয়ানবিশ’ চালু ছিল। এ ছাড়াও ‘হরকরা’ এবং ‘আকবর-নবিশ’ নামে সুলতানদের সাধারণ তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল। ভাট, কথক এবং নরসুন্দর মানুষকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক খবর জানাতো। কিন্তু মোগল আমলের বাংলায় সাংবাদিকতা ছিল শুরুর পর্যায়ে, প্রকৃত অর্থে সাংবাদিকতা হিসেবে বিষয়টি তখন বিকশিত হতে পারে নি।আধুনিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সাংবাদিকতার উৎপত্তি অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপে। উপনিবেশ হওয়ার কারণে এশিয়ার অন্য যে কোন দেশের আগেই বাংলা অঞ্চলে সাংবাদিকতা শুরু হয়। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে প্রকাশিত জেমস অগাস্টাস হিকি-র বেঙ্গল গেজেট প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলায় আধুনিক সাংবাদিকতার ইতিহাস শুরু হয়। পত্রিকার বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল, সকল পক্ষের জন্য উন্মুক্ত হলেও এটি কারও দ্বারা প্রভাবিত নয় এমন একটি সাপ্তাহিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক পত্রিকা।
১৮১৮ সালে বাংলা সাংবাদিকতা যাত্রা শুরু করে। সে বছর বেঙ্গল গেজেট (কলকাতা), দিগদর্শন (কলকাতা) এবং সমাচার দর্পণ (শ্রীরামপুর) নামে তিনটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম বাংলা সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ শ্রীরামপুর থেকে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের বর্তমান ভূখন্ড থেকে প্রথম প্রকাশিত সাপ্তাহিক রংপুর বার্তাবহ প্রকাশিত হয় রংপুর থেকে ১৮৪৭ সালে এবং ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঢাকা নিউজ প্রকাশিত হয় ১৮৫৬ সালে। ‘ঢাকা প্রকাশ’ ১৮৬১ সালে এবং ‘ঢাকা দর্পণ’ ১৮৬৩ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
বিশ শতকের শুরুতে সাংবাদিকতা পেশা এক নতুন মোড় নেয়। জাতীয়বাদী আন্দোলন, মুসলিম জাতীয়তাবাদের উত্থান, প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের সূচনা প্রভৃতি কারণে সংবাদপত্র সমূহের চাহিদা ও পাঠকসংখ্যা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। সাংবাদিকতাও হয়ে উঠে বলিষ্ঠ এক পেশা। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার এমনই এক যুগ পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব জনাব আবুল মনসুর আহমদ- এর।
আবুল মনসুর আহমদের প্রধান পরিচিতি সুসাহিত্যিক হিসেবে। একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞ ছিলেন। ব্যঙ্গ-রচয়িতা হিসেবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবস্থান যেমন সুনির্দিষ্ট, তেমনি সাংবাদিক হিসেবে তিনি বিভাগপূর্ব বাংলার একজন অভিভাবক-পুরুষ হিসেবে গণ্য। ব্রিটিশ ভারতে এই বাংলায় সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রেখে আবুল মনসুর আহমদ তৈরি করেছেন স্বকীয় ধারা; যা অনেক সময় অলক্ষ্যেই আলোচনার বাইরে থেকে যায়।
আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিক-জীবনের শুরু ১৯২৩ সালে কলকাতার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মাওলানা মনিরুযজামান ইসলামবাদীর ‘ছোলতান’ -এ সহ-সম্পাদক হিসেবে, বেতন মাত্র ৩০ টাকা এবং মাঝে কিছুদিন বাদ দিয়ে তা চলে ১৯৫০ সালে পর্যন্ত।
এর আগে ১৯১৮-২০ সালের মধ্যে মাসিক ‘সওগাত’ পত্রিকায় কয়েকটি গল্প প্রকাশিত হয় এবং আবুল কালাম শামসুদ্দীনের সাপ্তাহিক ‘মুসলিম জগৎ’-এ কিছুদিন কাজ করেন। এই পত্রিকাতে তিনি ‘ছহি বড় সোনাভানের’ অনুকরণে ‘ছহি বড়ো তৈয়বনামা’ নামের একটি রাজনৈতিক রম্য ও ‘সভ্যতার দ্বৈত শাসন’ নামে দার্শনিক-রাজনৈতিক প্রবন্ধ লেখেন, যা ওই সময় কলকাতার মুসলিম সমাজে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯২২ সালে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর ‘গোলামী সাহিত্য’ নামক প্রবন্ধ। তিনি এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করায় সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।এরপর তিনি যোগ দেন সাপ্তাহিক ‘মোহাম্মদী’তে। এই পত্রিকাতেই আবুল মনসুর আহমদ যথাযথ সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করেন। এরপর তিনি যোগ দেন সাপ্তাহিক ‘মোহাম্মদী’তে। এই পত্রিকাতেই আবুল মনসুর আহমদ যথাযথ সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করেন। এখানে তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। প্রচুর লেখালেখি, সহ-সম্পাদনা আর নানারকম দায়িত্বের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতার নানা বিষয় রপ্ত করেন। ওই সময় সপ্তাহে অন্তত ২টি করে উপসম্পাদকীয় লিখতে হত মনসুর আহমদকে।
দীর্ঘ পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাকরিসহ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি সাপ্তাহিক মুসলিম জগৎ, সাপ্তাহিক ছোলতান, সাপ্তাহিক মোহাম্মদী, সাপ্তাহিক দি মুসলমান, সাপ্তাহিক খাদেম (১৯২৯), দৈনিক নবযুগ (১৯৪১) পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং দৈনিক কৃষক (১৯৩৮) ও দৈনিক ইত্তেহাদ (১৯৪৭) পত্রিকায় প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিবেচনায় রাখতে হবে, ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর ২০-এর দশক ছিল অন্যরকম এক সময়। ১৯০৬ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে এক ঘোষণায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর এই সময় কলকাতাকে কেন্দ্র করে মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিকাশ পর্ব চলছিল। ভারতবর্ষে অপেক্ষাকৃত অগ্রসর হিন্দু সমাজের পাশাপাশি নানা ধরনের মুসলিম সংগঠন, সভা, সমিতি ইত্যাদি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করে।বলা যায়, হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিমরাও সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিক সত্তা নির্ধারণে বিশেষ সচেতন হয়ে ওঠে। ওই সময়টাতে সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে মুসলিম প্রধান পত্র পত্রিকার লেখাগুলো ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই পত্রিকাতে প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ বা কলাম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতো মুসলিম তরুণ-যুবাদের সভা-সমিতিতে। মুসলিম সমাজের এই জাগরণের প্রেক্ষাপট জায়গা করে নিয়েছিল আবুল মনসুর আহমদের লেখনীতে।
তিনি ‘মোহামম্মদী’তে দক্ষতার সঙ্গে উদ্দীপক শব্দ ব্যবহার করতেন। সাম্রাাজ্যবাদ বিরোধী ওইসব লেখায় তিনি ব্যবহার করতেন ‘রক্তচক্ষু’, ‘বজ্রমুষ্টি’, ‘সিংহ নিনাদ’ প্রকৃতির শব্দ; আর তাতে থাকত যুক্তিপূর্ণ কথামালার সমাহার। আবুল মনসুর আহমদের এসব লেখা তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির রিডিং রুমে একজন পাঠক জোরে জোরে শব্দ করে অন্য শ্রোতাদের জন্য পড়তেন।
১৯২২ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত- এই আট বছরে লেখা কয়েকটি ব্যঙ্গগল্প ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং এই গল্পগুলো সংকলিত করে ১৯৩৫ সালে তাঁর বিখ্যাত ‘আয়না’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এসময় ‘সওগাত’ অফিসে মুসলিম সাহিত্যিকদের নিয়মিত আড্ডা হত। কাজী নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, ইয়াকুব আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, হাবিবুল্লাহ বাহার, কবি মঈনুদ্দীন, কবি ফজলুর রহমান, কবি বেনজির আহমদ, কবি মহীউদ্দিন প্রভৃতি সমস্ত সাহিত্যিকদেরই ‘সওগাত’ অফিসের আড্ডায় যাতায়াত ছিল।১৯৩৮ সালের ডিসেম্বরে ‘নিখিল বঙ্গ কৃষক প্রজা সমিতি’র উদ্যোগে কৃষক-প্রজা আন্দোলনের মুখপত্ররূপে ‘দৈনিক কৃষক’ পত্রিকা বের হয় এবং এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবুল মনসুর আহমদ। তাঁর সুযোগ্য পরিচালনায় অল্প কয়েকদিনেই পত্রিকাটি সাংবাদিক মহলে সম্মান ও সাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।
আদর্শ, নিষ্ঠা, স্বাধীন মতবাদ এবং নিরপেক্ষ সমালোচনায় ‘কৃষক’ বেশ নাম করেছিল। ঐ সময় হক মন্ত্রীসভায় প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষা বিল নিয়ে পত্রিকাগুলোতে বিতর্ক শুরু হয়। এই বিল অনুযায়ী মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার কর্তৃত্ব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতছাড়া হয়ে যাবে। এই বিলের বিরুদ্ধে সমস্ত পত্র-পত্রিকা অবস্থান নিলেও আবুল মনসুর আহমদ তাঁর সম্পাদকীয়তে এই প্রস্তাবের সমর্থন করেন। ফলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের এক পর্যায়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
১৯৪১ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ‘দৈনিক নবযুগ’ পত্রিকা বের করেন এবং সম্পাদকের দায়িত্ব দেন আবুল মনসুর আহমদের ওপর, কিন্তু আবুল মনসুর আহমদ এ-দায়িত্ব নিতে সম্মত হলেন না। অবশেষে কাজী নজরুল ইসলামকে সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু, সব কাজ করতেন আবুল মনসুর আহমদ। তিনি তাঁর ‘আত্মকথা’য় এটিকে ‘বেনামী সম্পাদক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা জীবনের শেষ পর্ব শুরু হয় দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ পত্রিকা প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। এ সময় তিনি আলীপুর জজকোর্টের ওকালতি ছেড়ে মাসিক এক হাজার টাকা বেতনে দৈনিক ইত্তেহাদে সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
তিনি তাঁর ‘আত্মকথা’য় বলেছেন, “আমার গোটা সাংবাদিক জীবনের মধ্যে এইটাই আমার সবচেয়ে সুখ, আরাম ও মর্যাদার মুদ্দত ছিল।” দীর্ঘ পঁচিশ বছরের সাংবাদিক জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে এই পত্রিকাকে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে এসেছিলেন এবং তার ফলে এটি সমকালের শ্রেষ্ঠতম দৈনিকে পরিণত হয়।
ঐ সময়ে কোনো মুসলমান যুবক পত্রিকায় চাকরি পেতো না। আবুল মনসুর আহমদ বেছে বেছে মুসলমান যুবকদের পত্রিকায় চাকরি দিয়ে সাংবাদিকতায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে দৈনিক ইত্তেফাক ও অন্যান্য সমসাময়িক পত্রিকায় নিয়মিত সম্পাদকীয় লিখলেও মূলধারার সাংবাদিকতায় তিনি আর কখনো ফিরেননি।
আবুল মনসুর আহমদ জানতেন, সাংবাদিকসহ অফিসের নানা স্তরের কর্মীরাই সংবাদপত্রের প্রাণ। তাই সব সময়ই তিনি তাদের আর্থিক দিকটা বিশেষভাবে বিবেচনা করতেন। ইত্তেহাদের আগের পত্রিকাগুলোয় তিনি সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধির নানা চেষ্টা করেন; কিন্তু তিনি খুব একটা সফল হননি। ফলে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল মেধাবী কর্মী সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যান।
ইত্তেহাদে যেহেতু তিনি প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা পেয়েছিলেন, তাই সেটাকে কাজে লাগিয়ে সাংবাদিক ও অন্য কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করেন। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি একটি যথাযথ কাঠামো দাঁড় করান, যাতে উপকৃত হয়েছে সাংবাদিক সমাজ।এছাড়াও, ওই সময় পত্রিকার কম্পোজিং বিভাগ আজকের মতো এত আধুনিক ছিল না; বরং বলা যায়, অনেক প্রতিকূল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেই সময় কম্পোজিং-এর কাজ করতে হতো। বদ্ধ ঘরে, কালিতে মাখামাখি হয়ে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছিল তাদের কর্মক্ষেত্র।
আবুল মনসুর আহমদ তাদের এই কষ্ট দূর করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো সম্পাদক, যিনি কম্পোজিং বিভাগে ফ্যান দিয়েছিলেন; যাতে তারা একটু স্বস্তির পরিবেশে কাজ করতে পারে। ছোট্ট এই সিদ্ধান্তের কারণে তিনি সে সময় কলকাতায় বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।আবুল মনসুর আহমদ এর সাংবাদিকতা জীবন থেকে আমরা বেশ কিছু বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারি, যা বর্তমান সময়েও একই রকম বাস্তব, কার্যকর এবং সমানভাবে প্রয়োজন! বাংলা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতা আজ বিস্তৃত এক ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। অথচ, বাংলা সংবাদমাধ্যমকে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত করতে যে কজন মনীষী ব্যাপক ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন, আবুল মনসুর আহমদ তাঁদেরই একজন।
আবুল মনসুর আহমদ শুধু একজন সংবেদনশীল হৃদয় নিয়ে সাংবাদিকতা করেননি; এই পেশা তথা সাংবাদিকতাকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সাংবাদিকতার যে মূলনীতিগুলো রয়েছে, যথাক্রমে: নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, জবাবদিহিতা, স্বাধীনকর্ম, মানবিকতা এবং নিরপেক্ষতা- প্রভৃতির মতো বিষয়গুলোর অত্যন্ত সুন্দর সমাহার আমরা দেখতে পাই আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিক চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে।
রাজনীতিবিদ হিসেবে আবুল মনসুর আহমেদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে তিনি বাংলার মুসলীম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তানের আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত হন। তিনি যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। পূর্ববাংলার মঙ্গলের জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে শিল্পায়নে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা-নেতা ছিলেন। ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি ছিলেন।১৯৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ছাড়াও সাহিত্যিক হিসেবেও আবুল মনসুর আহমেদ একজন শক্তিমান লেখক ছিলেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মক রচনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আয়না ও ফুড কনফারেন্স গল্পগ্রন্থদ্বয়ে তিনি মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা, ভণ্ডামিসহ নানা কুসংস্কারের ব্যঙ্গ করেছেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে।তার লেখা গ্রন্থ সমূহের নাম হলো:-আয়না (১৯৩৬-১৯৩৭),ফুড কনফারেন্স (১৯৪৪),গালিভারের সফরনামা,আত্মকথা (১৯৭৩, আত্মজীবনী),আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯),শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২),আদুভাই,সত্য মিথ্যা (১৯৫৩),জীবনক্ষুধা (১৯৫৫),আবে হায়াত (১৯৬৮),হুযুর কেবলা (১৯৩৫),বাংলাদেশের কালচার (১৯৬৬),আসমানী পর্দা (১৯৬৪)।
সাহিত্য চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের "সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার"[৬][৭][৮] হিসাবে পরিচিত "স্বাধীনতা পুরস্কার" প্রদান করা হয় তাকে।[৯] এছাড়াও তিনি "বাংলা একাডেমী পুরস্কার" (১৯৬০) ও নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন।
আজ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের জন্ম দিন। তার জন্ম ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানাধীন ধানীখোলা গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুর রহিম ফরাজী, মাতার নাম মীর জাহান খাতুন।১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় মারা যান আবুল মনসুর আহমেদ।
বর্তমান সময়ে বাংলা সংবাদমাধ্যমের যে উৎকর্ষ, তা বুঝতে হলে সাংবাদিক হিসেবে আবুল মনসুরের জীবনী নিয়ে আলোচনা করাটা অবশ্য কর্তব্য এবং আমাদের দায়িত্বও বটে। একই সাথে, বাংলা সাহিত্যের বর্তমান যে দুর্দশা ও দৈন্যদশা চলছে, সেটি থেকে উত্তরণেও আবুল মনসুর ঘরানার সাংবাদিকতা আমাদের পথ প্রদর্শক।
সর্বোপরি বলা যায়, আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন সাংবাদিকতায় সেই সময়ের উজ্জ্বল এক বাতিঘর, যিনি শুধু তার সমসাময়িক সময়েই আলো ছড়াননি; আজও বাতিঘর হয়ে সাংবাদিকতা পেশাকে পথ দেখাচ্ছেন পেশাদারিত্ব ও উৎকর্ষতার।
সাংবাদিক হিসেবে আবুল মনসুরের একাগ্রতা ও অভিজ্ঞতাই তাঁকে সাহিত্যিক হিসেবে চির অমর এক আসনে স্থান দিয়েছে। রাজনীতিক হিসেবে এনে দিয়েছে গৌরবোজ্জ্বল সম্মাননা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন