বোমার স্তূপের ওপর বসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে হয় বিস্ফোরণের খবর আসছে, অথবা প্রচুর পরিমাণ বোমা উদ্ধার হচ্ছে। উদ্ধার করা হচ্ছে জিলেটিন স্টিক, ডেটোনেটর ইত্যাদি। এর শেষ উদাহরণ হলো নদিয়ায় মহেশনগর পূর্ব পাড়ায় সাইফুল শেখের বাড়িতে বিস্ফোরণ। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে এই বিস্ফোরণে সাইফুলের বাড়ির ছাদ উড়ে যায়। সাইফুল এলাকায় তৃণমূলের নেতা বলে পরিচিত।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, তার বাড়িতে প্রচুর বোমা মজুদ করে রাখা ছিল। সে জন্যই এত তীব্র বিস্ফোরণ হয়েছে। সাইফুলের পরিবারের এক ব্যক্তি পঞ্চায়েত সদস্য। ঘটনার পর সেখানে পুলিশ পৌঁছয়। কিন্তু তারা সে রকম কোনো ভূমিকা নেয়নি বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা টিভি৯কে বলেন, ‘পুলিশ এসে দেখে চলে গেছে। সাইফুলের বাড়িতে প্রচুর বোমা রাখা ছিল বলে এত তীব্র বিস্ফোরণ হয়েছে।’ তৃণমূল অবশ্য এনিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এদিন রাতেই নদিয়ার কাঁটাবেল অঞ্চলে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। পার্টি অফিস দখল করাকে কেন্দ্র করে এই বোমাবাজি হয়েছে বলে স্থানীয় মানুষ জানিয়েছে।
--বীরভূমে উদ্ধার বোমার মশলা-- এদিকে দিন কয়েক আগেই বীরভূমে দুই বস্তা জিলেটিন স্টিক ও তিন হাজার ২০০টি ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়। নলহাটির একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে এসব জিনিস রাখা ছিল। পুলিশ এলাকা ঘিরে রেখেছে। এ ছাড়াও নলহাটির লস্করপুর থেকে এক ব্যাগ তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। বীরভূমের রামপুরহাট, কাকরতলা, সদয়পুর, দুবরাজপুর থেকেও একের পর এক বোমা ও বন্দুক উদ্ধার হচ্ছে।
--মুর্শিদাবাদের কাহিনি-- অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থেকে ১২টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এই বোমাগুলো রাস্তায় ছিল। এই নিয়ে পরপর আট দিন ধরে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে বোমা উদ্ধার করা হলো। এ ছাড়াও গত কয়েক মাসে বাসন্তী, পাড়ুই, এগরার মতো বিভিন্ন জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরণ কী ইঙ্গিত দিচ্ছে? এগরায় স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বাজির কারখানায় বোমা বানানো হচ্ছিল। সেখানে ভয়ংকর বিস্ফোরণে ৯ জন মারা যান।
--সহিংসতার আশঙ্কা-- প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতার রেকর্ড রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। লোকসভা, বিধানসভা, পৌরসভা বা পঞ্চায়েত—যে কোনো নির্বাচনই হোক না কেন, সেখানে সহিংসতা হয়েই থাকে। এবার যে বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধার হচ্ছে, বিস্ফোরণ হচ্ছে, তা একটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটেও ব্যাপক সহিংসতা হতে পারে।’ প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রের মতো অনেকে মনে করেন, পঞ্চায়েতে ভোট জেতার জন্য বিভিন্ন দলের কর্মীরা এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন গোষ্ঠী মরিয়া হয়ে ওঠে। কারণ, এখন পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই বিভিন্ন পরিকল্পনার রূপায়ণ হয়। সেখানে প্রচুর অর্থ আসে। তাই পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার জন্যও এই লড়াইটা চলে, অনেক সময়ই তা সহিংস হয়ে ওঠে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন