গত দুইদিন ধরে পেট্রল তেলের সংকট দেখা দিয়েছে জয়পুরহাটের ফিলিং স্টেশনগুলোতে। জয়পুরহাটের ফিলিং স্টেশনগুলোতে পেট্রল মিলছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহন চালকরা। এই দুর্ভোগ গত কয়েক দিন ধরে চললেও দুই দিন ধরে বেশি হয়েছে।
সোমবার (১৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাকার মাথা এলাকার মামুন ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে অনেকেই পেট্রল নিতে আসছেন। কিন্তু ফিলিং স্টেশন থেকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাম্পে পেট্রল তেল নেই। প্রয়োজনে অকটেন নিতে পারেন। সদরের দাদরা জন্তিগ্রামের আমিনুর রহমান বলেন, পাম্পে পেট্রল নিতে এসে জানলাম তেল নেই।
এখন কোনো উপায় না পেয়ে অকটেন কিনতে হচ্ছে। ক্ষেতলালের দক্ষিণ হাট শহর থেকে মোটরসাইকেলে পেট্রল নিতে আসা সানাউল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাট শহরে কিছু জিনিস কিনতে এসেছিলাম। বাড়িতে যাওয়ার পথে এখানে পেট্রল নিতে এতে জানতে পারি পেট্রল নেই। উপায় না পেয়ে অকটেন কিনছি। মেসার্স মামুন ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা যমুনা অয়েল কোম্পানির তেল ব্যবহার করি।
গতকাল রোববার সকাল থেকে এই পাম্পের তেল শেষ হয়েছে। আমরা বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে কোনো পেট্রল পাচ্ছি না। আমাদের কাছে যে পরিমাণ পেট্রল জমা ছিল তা শেষ হয়েছে। অল্প কিছু অকটেন রয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মেসার্স আক্কেলপুর ফিলিং স্টেশনের প্রোপ্রাইটর বজলুর রশিদ মন্টু বলেন, আমার পাম্পে পদ্মা অয়েল কোম্পানির তেল ব্যবহার করা হয়।
প্রতি বছরই এই সময়ে এমন সমস্যা হয়। কিন্তু ডিপো থেকে কোনো কারণ জানায় না। বর্তমানে আমার ফিলিং স্টেশনে যেটুকু পেট্রল আছে। তা পরিচিত জন ও বিপদে পড়া লোকদের দেওয়া হচ্ছে। যারা পাইকারি কিনে তাদের তেল দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। আমার প্রতি সপ্তাহে ১৩ হাজার ৫০০ লিটার পেট্রল লাগে। কিন্তু বাগাবাড়ি ডিপো থেকে ৪ হাজার ৫০০ লিটার তেল দিচ্ছে।
পাঁচবিবি উপজেলার মেসার্স চৌধুরী ফিলিং ব্রাদার্স স্টেশনের প্রোপ্রাইটর আবু কালাম চৌধুরী বলেন, আমার পাম্পে মেঘনা কোম্পানির অয়েল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ডিপোতে তেমন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি মাসে দুই গাড়ি তেল লাগে। সেখানে হাফ-এক গাড়ি তেল পাচ্ছি। এই তেল দিয়ে যানবাহন চালকদের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটার্স এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জয়পুরহাট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোসফেকুর চৌধুরী হান্নান বলেন, আমরা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, এই তিন কোম্পানির অয়েল ব্যবহার করি।
আমরা ডিপোতে গিয়ে পরিমাণ মতো তেল পাচ্ছি না। এজন্য বর্তমানে এই তিন কোম্পানির পেট্রল তেলেই সংকট দেখা দিয়েছে। বাঘাবাড়ি ডিপোর যমুনা অয়েলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বরত ইনচার্জ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেলের সংকট নেই। তবে এই মাসে কী পরিমাণ তেল ফিলিং স্টেশনগুলো নেবে সেটা গত বছরের এই মাসের ওপর নির্ভর করে। তারা গত বছর তেল কম নিয়ে থাকলে সে পরিমাণই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বগুড়া অফিসের এজিএম জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা নিয়মিত ফিলিং স্টেশনগুলোকে তেল দিচ্ছি। হয়তো ফিলিং স্টেশনের মালিকরা দাম বাড়তে পারে বলে তেল স্টক করার চিন্তা করছে। কিন্তু আমরা মনিটরিং করে গত বছরের বরাদ্দের সঙ্গে তুলনা করে তেল দিচ্ছি। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বগুড়া অফিসের জিএমও (সেলস্) রাশেদুল আলম বলেন, জয়পুরহাট জেলার ৭টি ফিলিং স্টেশনে আমাদের কোম্পানির তেল সরবরাহ করা হয়।
আমরা গত বছরের মাসগুলোর হিসেবে তেল দিয়ে থাকি। কিন্তু এই মার্চ মাস শেষ না হতেই ফিলিং স্টেশনগুলো গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণ তেল নিয়েছে। তারপরও সংকট দেখাচ্ছে। অনেকেই মজুত করে রাখার জন্য এমন সংকট দেখাতে পারে।
সূত্রঃ ঢাকা পোস্ট
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন