উত্তর প্রদেশে পুলিশি হেফাজতে নিযার্তনের ভিডিও ভাইরালের পর, ভারতজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। মারধরের প্রশংসা করায় বিজেপি এমপিও পড়েছেন তোপের মুখে। মোবাইলে ধারণকৃত দুটি ভিডিওতে দেখা যায়- একদল মুসলিমকে বেধড়ক পেটাচ্ছে রাজ্যটির শাহরানপুর থানার পুলিশ। বারবার ক্ষমা চাইলেও, দিচ্ছিলো না ছাড়।
সেই ভিডিও ভাইরাল হলে, ' বিদ্রোহীদের রিটার্ন গিফট' শিরোনাম দিয়ে টুইটারে শেয়ার করেন বিজেপি এমপি শলভ ত্রিপাঠি। পুলিশি নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা দাবি করেছেন, এই ভাইরাল ভিডিওতে মারধরের ঘটনায় জড়িত কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বরং যাদের মারধর করা হয়েছে তাদের স্বজনরা বলছেন, তারা নির্দোষ। তাদের মুক্তি দেয়া উচিত। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার ইসলামের নবীকে অবমাননার জেরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে, যার কারণে অনেক মুসলিমকেই আটক করেছে পুলিশ। তবে এক ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, আটক মুসলিমদের মারধর করছে পুলিশ।
জানা যায়, উত্তর প্রদেশে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় একদল মুসলিমকে মারধর করেছে পুলিশ, এমন একটি ভিডিও অনলাইনে এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভারতে মুসলিম ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দায় নিয়ে বেশ অনেকবারই কথা বলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধিতে বিজেপির অনেক নেতার পৃষ্ঠপোষকতার দায় দেখছেন তারা।
এবারও মুসলিমদের পুলিশি নির্যাতনের ভিডিওটি শেয়ার দিতে দেখা গেছে বিজেপি নেতা শলভ ত্রিপাঠিকে। তিনি ক্যাপশনে লিখেন, ‘বিদ্রোহীদের জন্য একটি ফেরত উপহার।’ ত্রিপাঠি বিজেপির একজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ। যেখানে এই পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের তিনি সাবেক গণমাধ্যম উপদেষ্টা। তবে পুলিশি নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা দাবি করেছেন, এই ভাইরাল ভিডিওতে মারধরের ঘটনায় জড়িত কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বরং যাদের মারধর করা হয়েছে তাদের স্বজনরা বলছেন, তারা নির্দোষ। তাদের মুক্তি দেয়া উচিত। এই মারধরের ঘটনায় নির্যাতনের শিকার একজন হলেন সাইফ। তার বড় বোন সেই ভিডিও দেখার সময় বলছিলেন, ‘এটা আমার ভাই, ওরা তাকে অনেক মারছে, সে খুব চিৎকার করছে।’ ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ভারতীয় পুলিশ একদল মুসলিমকে মারধর করছে, যাদের মধ্যে জেবার ভাইও রয়েছেন। সাইফের পরিবারের দাবি, শুক্রবার স্থানীয় সময় ৫টার দিকে সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল এক বন্ধুর জন্য বাসের টিকিট কাটতে।
তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে সাহারানপুর কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। জেবা যখন সেখানে তাকে দেখতে যান, তখন তিনি তার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘মারধরের কারণে তার শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল, এমনকি সে বসতেও পারছিল না।’ বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার কোনো নিন্দা করা হয়নি। এদিকে দিল্লির জামা মসজিদে গত জুমার নামাজের পর বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়।
কলকাতার পাশে বম্বে রোড অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভ হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়। জামা মসজিদের সামনে মুসল্লিরা পোস্টার-ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ ও স্লোগান দেন। তারা নূপুর শর্মাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট শ্বেতা চৌহান বলেন, ‘জুমার নামাজের জন্য প্রায় ১৫০০ লোক জামা মসজিদে জড়ো হয়েছিল। নামাজের পরে প্রায় ৩০০ লোক বেরিয়ে নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দালের কটূক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।’ তিনি বলেছিলেন, ‘এই লোকেরা রাস্তায় অনুমতি ছাড়াই প্রতিবাদ করেছে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন