বর্তমান প্রজন্মের দুর্ভাগ্য রাজনীতির জগতে তাদের এখন কোনো রোল মডেল নেই। নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কিশোর-তরুণরা নতুন করে বড় হওয়ার স্বপ্ন বোনে। মাহথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার নতুন প্রজন্মকে পথ দেখান। সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু আমাদের চেতনাকে শানিত করতে পেরেছিলেন বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ না দেখা এই প্রজন্ম এগিয়ে যাওয়ার বড় কোনো স্বপ্ন বোনার প্রেরণা কার কাছ থেকে নেবে?
আদর্শিক রাজনীতি এখন নির্বাসিত। ক্ষমতার প্রশ্নে মোহাচ্ছন্ন রাজনীতিকরা যেভাবে ছুটছেন তাতে কোনো সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশবাসীর কল্যাণ চিন্তার কোনো লেশ নেই আমাদের রাজনীতিকদের
ক্ষমতার মসনদে পৌঁছার দৌড়ে। তার মধ্যে আমাদের নেতা-নেত্রীরা যেভাবে নিজেদের উন্মোচিত করছেন নতুন প্রজন্মের সামনে তাতে এই ভবিষ্যতের কান্ডারিরা কী শিক্ষা পাবে তা ভেবে শঙ্কিত হতে হচ্ছে।
উনিশ শতকের আমেরিকান লেখক জেমস ফ্রিমেন ক্লার্ক বলেছিলেন- ‘একজন রাজনীতিচর্চাকারী পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে চিন্তা করেন, আর রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তি পরবর্তী জাতি সম্পর্কে।’ কথাটি যে কত সত্য তা বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি দেখলে অনুধাবন করা যায়। আমাদের ক্ষমতাপ্রিয়
রাজনীতিকরা রাজনীতিচর্চাকারীই রয়ে গেলেন। তাই গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে চড়িয়ে পোশাকি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সবাই ক্ষমতাসীন হতে চান। বর্তমানে দাঁড়িয়ে তারা চান তাৎক্ষণিক ফসল ঘরে তুলতে।
এতে ভবিষ্যতে জাতি বিপন্ন হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এ ধারার রাজনীতিচর্চাকারীদের জালে বন্দি এদেশের সাধারণ মানুষ এখন ভয়ংকর কঠিন সময় পার করছে। জাতীয় নেতা-নেত্রীদের আচরণ বচন অধিকাংশ সময় আমাদের বিব্রত করে। একজন সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানী বলতে পারবেন আমাদের দেশের দায়িত্বজ্ঞানহীন
রাজনীতিকরা তাদের আচরণ দিয়ে কতটা ক্ষতি করছেন প্রজন্মের।
এখন টিভি চ্যানেলগুলোর কারণে কোনো খবরই অজানা অদেখা থাকে না। জাতীয় নেতা-নেত্রী হিসেবে রাজনৈতিক অঞ্চলের মানুষেরা তাদের কতটুকু বলা উচিত, আচরণ কেমন থাকা উচিত সে ব্যাপারে মোটেও সতর্ক থাকেন না।
এসব বাস্তবতায় আমরা দারুণভাবে হতাশা বোধ করছি। রাজনীতিবিদগণই
তো যুগ যুগ ধরে দেশ ও রাজনীতি পরিচালনা করেন। প্রজন্মের কাছে রাজনীতিবিদগণই অনুকরণীয় হবেন। রাজনীতিবিদগণ তাদের প্রাজ্ঞ চিন্তায়, দেশপ্রেমিকতায়, মেধায় ও মননে হবেন প্রাতঃস্মরণীয়।
তাদের প্রভাবে প্রজন্ম আলোকিত হবে- শাণিত হবে। কিন্তু চলমান রাজনীতি থেকে বাস্তবে কী শিখছে আমাদের প্রজন্ম। যাদের আমরা ভবিষ্যতের কান্ডারি বিবেচনা করি তাদের জন্য সুস্থ পথ রচনা করতে রাজনীতিকরা একটিবারও কি আত্মচৈতন্যে ফিরে আসবেন না। অতিমাত্রায় ক্ষমতান্ধতা তাদের সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা থেকে মাঝে মাঝে সরিয়ে দেয়। আমরা আমাদের রাজনীতিকদের নিয়ে গর্ব করতে চাই। চাই তারা স্বাভাবিক থাকুন। দেশপ্রেমের শক্তি তাদের মার্জিত করুক। তারা অনুকরণীয় হয়ে উঠুন আমাদের প্রজন্মের কাছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন