সমুদ্র উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো এক ধাঁপ এগিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বালিয়াতলী পয়েন্টে আন্ধারমানিক নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। চলছে সৌন্দর্যবর্ধনসহ নদীর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের অসমাপ্ত কাজ। এ সেতুটি খুলে দেয়া হলে উন্মোচিত হবে পর্যটন এলাকার আরেক দূয়ার।
এর ফলে উপজেলার বালিয়াতলী, লালুয়া, মিঠাগঞ্জ, ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। ১৩টি স্প্যানের ওপর ফুটপাথসহ নয় দশমিক ৮ মিটার প্রস্থ।
৬৬৮ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটির দুই পাড়ে রয়েছে পাঁচশ’ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক। এছাড়া পায়রা বন্দরের সাথে ফোর লেন সড়ক যুক্ত হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর এ সেতুটির কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জোয়ার ভাটার সমস্যা এবং মহামারী করোনার কারণে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে দেরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
স্থানীয়রা জানান, বিকল্প পথ হিসাবে এ সেতুটি পার হয়ে পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি ঘুরে কুয়াকাটা যাওয়ার সুযোগ মিলবে পর্যটকসহ দর্শনার্থীদের। এছাড়া ভারি যানবাহন সরাসরি পায়রা বন্দর টার্মিনালে যেতে পারবে। টিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহামুদুল হাসান সুজন মোল্লা বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কলাপাড়ায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাটি ও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রসহ উন্নয়নের ব্যাপক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। আর এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফিরে এসেছে নতুন মাত্রা।
ধুলাসার আলহাজ জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক ইউসুফ আলী বলেন, শুধু কুয়াকাটা নয়, এই পথে পায়রা বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেলসহ পর্যটনপল্লী গঙ্গামতির নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এ সেতুটি উন্মুক্ত হলে সাগরপাড়ের ব্যবসায়ীরা এবং বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা রাঙ্গাবালীর লোকজন খুবই উপকৃত হবে। সহজেই ইলিশসহ ধান ও চাল মোকামে পাঠানো যাবে।
এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী মো. মহর আলী বলেন, সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এলজিইডি সেতু প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন খান বলেন, সেতুটি নির্মাণের পূর্বে বুয়েট কর্তৃক হাইড্রোলজি ও মরফোলজি স্ট্যাডিসহ ইনভারনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট সম্পন্ন করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতর থেকে যথাযথ নিয়ম মেনে ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ থেকে চূড়ান্ত নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স গ্রহণ করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত পরিবর্তনও আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে কোন সময় এ সেতুটি উদ্বোধন করতে পারেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন