বিশ্বের প্রাচীনতম যৌনরোগ সিফিলিস উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ১৪৯০ সালের দিকে প্রথমবারের মতো এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এর প্রাথমিক লক্ষণ খুব সহজেই নজর এড়িয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা করা না হলে সিফিলিসের পরিণতি গুরুতর হতে পারে। গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে যৌন সংক্রামিত রোগের (এসটিআই) সর্বশেষ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, সিফিলিসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সিফিলিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ শতাংশ বেড়ে গত ৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি সতর্ক করে বলছে, সিফিলিসের মহামারি কমে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
কিছু ‘আতঙ্কজনক’ নতুন প্রবণতার কারণে এই রোগের সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ‘জন্মগত সিফিলিস’, সন্তান এ ক্ষেত্রে মায়ের পেটে থাকতেই এই রোগে আক্রান্ত হয়। ওই মা সাধারণত সংক্রমিত হন তার যৌনসঙ্গীর কাছ থেকে। এই রোগের সংক্রমণে মৃত সন্তান প্রসব, শিশুমৃত্যু এবং আজীবন স্বাস্থ্য সমস্যা ঘটতে পারে। এই ঘটনা অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে বিচলিত করে তুলেছে।
সিডিসি’র যৌন রোগ প্রতিরোধ বিভাগের পরিচালক লিয়েন্ড্রো মেনা বিবিসিকে বলেন, ১৫-২০ বছর আগে আমরা ভেবেছিলাম সিফিলিস নির্মূলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। তবে এখন আবারও রোগটির বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। গত ২০ বছরে এই রোগে এত বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী সিফিলিসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ লাখ।
সিফিলিসের সংক্রমণ ঘটে ট্রেপোনেমা প্যালিডাম নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এই রোগের লক্ষণগুলোতে রয়েছে চারটি ধাপ। প্রথম ধাপে নারী বা পুরুষের যৌনাঙ্গে এক ধরনের ব্যথাহীন কালশিটে বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই পর্যায়ে পেনিসিলিন ইনজেকশনের একটি ইন্ট্রামাসকুলার ডোজ সংক্রমণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়। চিকিৎসা না করা হলে সিফিলিসের কারণে দীর্ঘমেয়াদী স্নায়বিক এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ হতে পারে।
কানাডায় ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সিফিলিস রোগ বেড়েছে ৩৮৯ শতাংশ, অন্যান্য যৌন রোগের সংক্রমণের তুলনায় যা অনেক বেশি। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিফিলিসের ঘটনা ঘটছে সমকামী ও উভকামীদের মধ্যে। এই রোগের মহামারির পেছনে যেসব সমস্যা কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে তা হলো: যৌনরোগ পরীক্ষা কেন্দ্রে সেবা নিতে গিয়ে সমস্যা, সিফিলিসকে ঘিরে লজ্জা এবং সামাজিক কলঙ্ক ও ভাষাগত বাধা।
ব্রাজিলের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্কুলে যাননি এমন কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে জন্মগত সিফিলিসের হার অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে সিফিলিস স্ক্রিনিং করে এমন পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের সমস্যায় পড়তে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় ২০২০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সিফিলিসের হার ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানের গবেষকরা ডেটিং অ্যাপ এবং সিফিলিসের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে মানুষের যৌন অভ্যাসের পরিবর্তন বোঝার চেষ্টা করছেন।
গবেষণার বরাতে তারা বলছেন, ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের সঙ্গে ‘সিফিলিস সংক্রমণের উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক’ রয়েছে। এসব অ্যাপের ব্যবহারের ফলে অনিরাপদ যৌনমিলনের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, সিফিলিস রোগ মোকাবিলার পথটি সোজা। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার ওষুধ আমাদের হাতে আছে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঘটনা বাড়লেও পেনিসিলিন এক্ষেত্রে এখনো সেরা চিকিৎসা। তারা বলছেন, নিরাপদ যৌন চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য আরও বেশি পরীক্ষার প্রয়োজন। সিফিলিসের সঙ্গে সামাজিক কলঙ্ক দূর করতে আরও বেশি করে প্রচারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
সূত্র: বিবিসি
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন