প্রতারণা মামলার আসামি ৮ বছরের শিশু

প্রতারণা মামলার আসামি ৮ বছরের শিশু

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইসলাম চয়ন। সহপাঠীরা যখন বিদ্যালয়ের ক্লাস করছে, সে সময়ে চয়ন মা ও মামার হাত ধরে পটুয়াখালী আদালতের বারান্দায় ঘুরছে। প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের একটি মামলায় আট বছর বয়সী চয়নকে পরিবারের অনান্য সদস্যদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে।

আর এতে চয়নের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর। এদিকে, বুধবার চয়ন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট আদালত আবেদনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে পাঠায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক তাৎক্ষণিক ভাবে শিশু চয়ন এবং তার ১৭ বছর বয়সী বোন তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করেন।

এ ঘটনায় আদালত পাড়ায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়। চয়নের আইনজীবী মো. সোলায়মান সিকদার জানান, কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি এলাকার বাসিন্দা মাসুম তালুকদার। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মাসুম তালুকদার মারা যাওয়ার পর জনৈক মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ৮৪ লাখ টাকা দাবি করে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের নামে এ বছরের ১২ আগস্ট পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শিশু চয়নের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২২ বছর।

প্রকৃত পক্ষে জন্ম নিবন্ধন অনুয়ায়ী চয়নের জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৩। এ ছাড়া চয়নের বোন তুলাতলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া ইমরোজ তৃপ্তির বয়স ১৭ বছর হলেও তার বয়স ১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া চয়নের মা, দাদিসহ ওই মামলায় মোট আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

বাদী মাসুম বিল্লাহ পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৮নম্বর ওয়ার্ড এর টাইন কালিকাপুর এলাকার (মিরাজ ভবন) বাসিন্দা। এ ঘটনায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে আসামিরা হাজির হন। বুধবার আসামি শিশু চয়ন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত হলে আদালতে বিব্রত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিকুর রহমানের কাছে জামিনের আবেদন করলে বিচারক মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে প্রেরণ করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক মো. মইনুল হক তাৎক্ষণিক ভাবে আসামি শিশু চয়ন ও তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করে এবং বাদীর পক্ষের আইনজীবীকে তলব করেন।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. মোহসীন উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে তিনি আদালতে কথা বলবেন বলে জানান। পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বিচার প্রার্থী এবং আইনজীবীদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’ শিশু চয়নের মা সাবরিনা বিশ্বাস মনু বলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে তাদের হয়রানি এবং জমি জমা দখলের লক্ষ্যেই এই ধরণের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password