হজের আনুষ্ঠানিকতা খুবই পরিশ্রমের। এ জন্য শরীরকে অবশ্যই সুস্থ রাখতে হবে। অসুস্থতা থাকলে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, পানি ও খাবার।
অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে অবস্থান করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সঙ্গে রাখতে পারেন কেক, বিস্কুট, কলা, আপেল, নাশপাতি, খেঁজুর, কিশমিশ, আলু বোখারা, শুকনা মিষ্টি, বাদাম, জুস, দুধ ইত্যাদি। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা সঙ্গে রাখতে পারেন চিড়া ভাজা, মুড়ি, ভুট্টার খই, চিনি ছাড়া বিস্কুট, দুধ ইত্যাদি। মদিনায় বাঙালিদের অবস্থান যেখানে, সেখানে মুড়িসহ বাংলাদেশের অনেক খাদ্যপণ্য পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস থাকলে প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর খাবার খেতে হয়। এ জন্য দেরি না করে কিছু না কিছু গ্রহণযোগ্য খাবার খাওয়া উচিত যাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয়। তাদের ডায়াবেটিক গাইড বুকটি সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন। এতে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, খাদ্যতালিকা সবই রয়েছে। এছাড়া এমন একটি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে, যাতে লেখা থাকবে-‘আমি একজন ডায়াবেটিস রোগী।’
হজে যাওয়ার সময় ইনসুলিন, গ্লুকোমিটার, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, থার্মোমিটার, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে। যে কোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে খাবার ও ওষুধ গ্রহণের সময় ও পরিমাণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নিষিদ্ধ খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তুলনামূলকভাবে গরু, দুম্বা, খাসি, মহিষের মাংসের তুলনায় উটের মাংসে চর্বির আনুপাতিক হার কম। সুতরাং হৃদরোগী নিশ্চিন্তে উটের মাংস খেতে পারেন।
হজের সময় প্রচুর হাঁটাহাঁটি ও ইবাদতের জন্য শরীরের শক্তি বা ক্যালরি ব্যয় হয়। দেখা যায় অনেকে বেশি শক্তি লাভের আশায় বেশি খেয়ে থাকেন। ফলে পেটে গ্যাস বা বদহজম হয়। পাকস্থলী যতখানি খাবার পরিপাক করতে পারে, তার বেশি হলেই পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, বমি, পেটে অস্বস্তি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। তাই খাবার খেতে হবে কিছুটা বেশি, তবে অতিরিক্ত নয়। অনেকে আবার এতই কম খান যে, শরীরের স্বাভাবিক শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। যার ভাত-রুটি কম খাওয়ার অভ্যাস তারা মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, বাদাম অর্থাৎ প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খাবেন। অপর্যাপ্ত খাবারের ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, অবসাদ, মাথা ঘোরা, শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায় কোনো কোনো মোয়াল্লেম হাজিদের নাশতার দায়িত্ব নেন না। সে ক্ষেত্রে কেউ কেউ সকালে কিছুই খান না। অথচ সকালের নাশতা না খেয়ে ইবাদত করতে গেলে অবশ্যই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে আশপাশের হোটেল থেকে নাশতা করে নেওয়া আবশ্যক।
কোনোক্রমেই বাসি খাবার খাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় বাসি খাবারে গন্ধ না হলেও জীবাণুর বিস্তার ঘটে থাকে। এতে পেটে গ্যাস, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হতে পারে। সকালে নাশতা খাওয়ার জন্য রাতের খাবার বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা না করাই ভালো। হজের সময় প্রচুর পানি, জুস, দুধ, লাবাং, যে কোনো শক্তিদায়ক পানীয় পান করা উচিত। কারণ অত্যধিক পরিশ্রম, গরম ও শুকনা আবহাওয়ার কারণে দেহে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি বা পানীয় গ্রহণ করতে হবে। পানি দেহের জলীয় ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন