বহুল আলোচিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদেরের বাংলাদেশের অন্যতম ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের কি যোগসূত্র? ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদেরের কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মুসা বিন শমসেরের কাছে তিনটি বিষয়ে স্পষ্ট হতে চাইবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এর আগে কাদেরকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে মুসার কেমন সখ্যতা ছিল, সেটিও ঘেটে দেখছে গোয়েন্দারা।
জানা গেছে, কাদেরের বিষয়ে জানতে মুসাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের ডাকা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যেই তিনি সেখানে আসবেন বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে কাদের ছবি তুলে চাকরিপ্রার্থী, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করতেন। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন তার আইন উপদেষ্টা বলে। তার বেশ কিছু ভুঁইফোড় কোম্পানিও রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, সামীন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী গ্রুপ, হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস ও ডানা মোটরস। কাদের বড় ধরনের প্রতারণা করেন হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশনের ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের’ মাধ্যমে।
২০০৪-০৬ সালে দেশের শত শত মানুষের কাছ থেকে সরকারি অনুদানে বাড়ি ও খামার তৈরি করার নামে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। কাদের ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পল্লবী ও তেজগাঁও ছাড়া আরও একাধিক থানায় অর্ধডজন মামলা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি বা তার বেশি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণা করতেন তিনি।
মুসার কাছে যে তিনটি বিষয় জানতে চাওয়া হবে, কাদেরের সঙ্গে মুসার আর কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে? কেন দশম শ্রেণি পাস কাদেরকে মুসা তার আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিলেন? এ ছাড়া কেন এই প্রতারককে ২০ কোটি টাকার চেক দিলেন এবং এ ঘটনা সত্যি কি না।
এদিকে গতকাল রোববার (১০ অক্টোবর) মুসার ছেলে আইনজীবী জুবি মুসা গোয়েন্দা কার্যালয়ে গিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, কাদেরের ঘটনায় তার বাবা ‘ভিকটিম’, নাকি এই চক্রের সঙ্গে সন্দেহভাজনকভাবে জড়িত?
এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, কাদেরের প্রতারণা ও মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে তার কী ধরনের সম্পর্ক, এটি জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মুসার ছেলে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ ঘটনায় তিনি তার বাবার ভূমিকার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নিতে চেয়েছেন।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার আবদুল কাদের ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের আইন উপদেষ্টা দাবি করতেন। কাদেরের কাছে মুসা বিন শমসেরের প্রতিষ্ঠানের চুক্তিপত্রসহ বিভিন্ন নথি পাওয়া গেছে। যে কারণে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ৭ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসা থেকে কাদেরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এ সময় কাদেরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও সততা প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, অফিস ম্যানেজার শহিদুল আলম ও অফিস সহায়ক আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাদেরের কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে ডিবি। একসময়ের মাছ বিক্রেতা কাদের এখন প্রাডো গাড়িতে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি নিয়ে চলাফেরা করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন