বাড়ির সামনে প্রায় শ’খানেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। অটোরিকশা, রিকশা ও মোটরসাইকেল রাস্তায় পার্কিং করার কারণে রীতিমতো জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কী কারণে উৎসুক জনতার এমন ভিড়? মূলত অষ্ট্রেলিয়া ফেরত এক ব্যক্তিক দেখতে তাদের বাড়ির সামনে এমন কাণ্ড!
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ পৌর এলাকায় জনৈক এক অস্ট্রেলিয়া ফেরত প্রবাসীর বাড়ির সামনে এমন চিত্র দেখা যায়। আজ শুক্রবারও বাড়ির সামনে কৌতূহলী মানুষকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
ওই প্রবাসীর পরিবার ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, দুই-তিন দিন আগে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ওই ব্যক্তি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর থেকে করোনাভাইরাস বিষয়ে সতর্কতার জন্য স্বেচ্ছায় তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে শুরু করেন। এই খবর পেয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরা তাঁকে দেখতে আসা শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁকে দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় পড়ে যায়। তাঁর দেখা না পেয়ে উৎসুক জনতা অনেকে বাড়ির পাশে অপেক্ষা করেন। কেউ কেউ বাড়ির বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে তাঁকে দেখার চেষ্টা করেন।
প্রতিবেশী সরাজ মিয়া বলেন, ‘কোয়ারেন্টিন’ জিনিসটা কী এ নিয়ে মানুষের কৌতূহল। কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কীভাবে মানুষ সময় কাটায়, তা দেখার জন্য উৎসুক এলাকাবাসী ভিড় করেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ওই ব্যক্তি বিব্রত। কেউ যেন তাঁকে দেখতে ভিড় না করেন, সেই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।’
নিজাম মিয়া নামে স্থানীয় আরেকজন বলেন, ‘সবাইকে ঘরের ভেতর থাকতে বলা হয়েছে। কারণ বাইরে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আছে। কিন্তু, কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।’
সূত্র জানিয়েছে, গতকাল নবীগঞ্জ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে আসা পাঁচ প্রবাসীর সন্ধান পাওয়া যায়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে (নিজ বাসায় আলাদা কক্ষে) থাকার অনুরোধ করেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত জানতে পেরেছি ইতালি, আমেরিকা, সৌদি আরব, দুবাই থেকে ৫ জন দেশে ফিরেছেন। এসব ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে এবং বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও অনেকেই বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন তাদের নামের তালিকা করে তাদেরও হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, মানুষ না বুঝে হয়তো সেখানে ভিড় করছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসময় তিনি বলেন, গত ১৫ দিনে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন তাদের সবার নাম হালনাগাদ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা যেন ঘরের বাইরে ঘুরাফেরা না করে সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদের নামের হালনাগাদ করা হয়েছে পর্যাক্রমে প্রবাসীদের সংখ্যা বাড়বে।
গত ১৫ দিনে যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন তাদেরকে অবশ্যই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে নবীগঞ্জে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কোন রোগী পাওয়া যায়নি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন