বউকে মারার পর চুল কেটে দিলেন স্বামী

বউকে মারার পর চুল কেটে দিলেন স্বামী

শরীয়তপুর সদর পৌরসভায় এক গৃহবধূকে (১৯) নির্যাতনের পর চুল কেটে দেয়ার অভিযোগে তার স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। জানা গেছে, নির্যাতনে ওই নারী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।

ভুক্তভোগীর বাবা বাদীয় হয়ে শুক্রবার (৫ মার্চ) সদরের পালং মডেল থানায় অভিযোগটি করেন। এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হুগলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

থানায় অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হুগলি গ্রামের আলী আহাম্মদ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসেন মোল্লার (৩০) সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ওই নারীর। সাদ্দাম রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে অফিস সহায়ক হিসেবে মাস্টার রোলে কর্মরত।

বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাতে ওই গৃহবধূকে মারধর করতেন সাদ্দাম, তার বাবা আলী আহম্মদ (৬০) ও মা রোকেয়া বেগম (৫০)। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সাদ্দামের চাকরি নিয়মিত ও বাড়ি করার জন্য স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেয় অভিযুক্তরা। এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয়। একপর্যায়ে সাদ্দাম স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সঙ্গে ঠুকে দেন। এতে তিনি জ্ঞান হারান। এরপর কাঁচি দিয়ে তার চুল কেটে দেয়া হয়।

ভয়ে বিষয়টি বাবা-মাকে জানাননি ওই গৃহবধূ।

এদিকে, মারধরের পর চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন ওই নারী। মাথায়ও যন্ত্রণা শুরু হয়। খবর পেয়ে মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন তার বাবা আবু তালেব খান। পরে তাকে গত ৩ মার্চ গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আই হসপিটাল এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠান।

এদিকে, শুক্রবার ওই নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাকে আবার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি চোখে দেখতে পারছেন না এবং তীব্র ব্যথায় কাতরাচ্ছেন।

তার মা ফাহিমা বেগম বলেন, সাদ্দাম ও তার মা-বাবা মিলে আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। মেয়ের মাথা ওয়ালের সঙ্গে ঠুকে দিয়েছে। আমার মেয়ে এখন চোখে দেখে না। মেয়ের মাথার চুল কেটে দিছে। শরীর ও মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি। তার অবস্থা খুবই খারাপ। আমি এর বিচার চাই।

তার বাবা আবু তালেব খান বলেন, চাকরি ও বাড়ি করবেন বলে সাদ্দামও তার পরিবার আমার মেয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চায়। মেয়ে বলছে, বাবা গরিব সামান্য ছোট একটি দোকান করে। এতো টাকা পাবে কোথায়? বলার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি মিলে তাকে মারধর শুরু করে। মেয়ে ভয়ে আমাদের কিছু বলেনি। মেয়ের মাথার সুন্দর চুলগুলোও কেটে ফেলেছে। জানতে পেরে উদ্ধার করে চিকিৎসা করাচ্ছি। ওরা দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছে।

এদিকে, নির্যাতনের বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন মোল্লা মোবাইল ফোনে বলেন, আমি কেন আমার স্ত্রীকে মারধর করবো? কেনই বা চুল কাটব? আমি শুনেছি সে অসুস্থ। তাই শ্বশুরের মোবাইলে বার বার ফোন দিচ্ছি, তিনি ধরছেন না।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, গৃহবধূর নির্যাতনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password