মিসরের কারাগারে বিনা বিচারে চার বছরের বেশি সময় বন্দী থাকার পর মুক্তি পেয়ে পরিবারের সাথে মিলিত হয়েছেন আলজাজিরার সাংবাদিক মাহমুদ হুসেইন। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই সংবাদমাধ্যমের আরবি চ্যানেলে কাজ করা মিসরীয় এই সাংবাদিককে শনিবার কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর আগে, পরিবারের সাথে সাক্ষাত করতে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বরে কাতার থেকে মিসরে আসার পর মাহমুদ হুসেইনকে গ্রেফতার করে মিসরীয় পুলিশ। কায়রো হুসেইনের বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হওয়া’ ও ‘মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার’ অভিযোগ আনে। খবর- আলজাজিরা ও টিআরটি ওয়ার্ল্ডের
মাহমুদ হুসেইনের ভাই নাগেহ হুসেইন ও আইনজীবী তাহের আবুল নাসর জানিয়েছেন, এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত সাপেক্ষে সতর্কতামূলক পদক্ষেপসহ কায়রোর এক আদালত হুসেইনের মুক্তির আদেশ দেন।
নাগেহ হুসেইন জানান, কারামুক্তির শর্ত হিসেবে মাহমুদ হুসেইনকে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার পুলিশ স্টেশনে হাজিরা দিতে হবে।মাহমুদ হুসেইনের মুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আলজাজিরা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত ডাইরেক্টর জেনারেল মোস্তফা সুয়াগ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি সত্য উদ্ভাসনের এক মুহূর্ত এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এক অনুপ্রেরণামূলক মাইলফলক।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আলজাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক মাহমুদের মুক্তির সংবাদকে স্বাগত জানাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু পেশাদারিত্ব রক্ষায় মাহমুদ বিগত চার বছর যে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, কোনো সাংবাদিকই তার শিকার হতে পারেন না।’
মোস্তফা সুয়াগ তার বিবৃতিতে বলেন, ‘আজকে আমরা আনন্দিত তার জীবন থেকে চার বছর ছিনিয়ে নেয়ার ও তাকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার পর পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ায়। আমরা আশা করি মাহমুদ দ্রুত সুস্থ হয়ে অতীতের কঠিন সময়কে অতিক্রম করে তার মর্যাদাপূর্ণ পেশাজীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন।’
এর আগে শনিবার ফেসবুকে মাহমুদ হুসেইনের মেয়ে আজ-জাহরা হুসেইন এক পোস্টে বলেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া বাবার মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। … আজ বাবা তার ঘরেই এসেছেন।’
নয় সন্তানের বাবা মাহমুদ হুসেইন দুই দশকের বেশি সময় আরবি ভাষার বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা নেটওয়ার্কের আরবি চ্যানেলে ফ্রিল্যান্স কাজ করার পর, হুসেইন ২০১০ সালে পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে ওই চ্যানেলে যোগ দেন। প্রথমে কায়রোর আলজাজিরা অফিসে কাজে যোগদানের পর তাকে কাতারের দোহায় চ্যানেলের হেড অফিসে নিয়োগ দেয়া হয়।
৫৪ বছর বয়সী মাহমুদ হুসেইন পরিবারের সাথে সাক্ষাতের জন্য ছুটিতে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর দোহা থেকে কায়রো এলে মিসরীয় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা কোনো আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হলে পরে ২৩ ডিসেম্বর আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হওয়া’ ও ‘মিথ্যা সংবাদ প্রচার ও বিদেশি কর্তৃপক্ষের থেকে অর্থ নিয়ে দেশের মর্যাদা অবমাননার’ অভিযোগ আনে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনি কোনো অভিযোগপত্রই তৈরি করা হয়নি। হুসেইন ও আলজাজিরা কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গ্রেফতারির পরপরই, আলজাজিরা হুসেইনের মুক্তির দাবিতে বিশ্বজুড়ে প্রচারণা অভিযান শুরু করে।মিসরীয় কর্তৃপক্ষ ১২ বারের বেশি হুসেইনের আটকাদেশ বাড়ায়, যা বিচারের আগে আসামীকে আটক রাখার সর্বোচ্চ সীমা পার করেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন