ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিনের (৩৫) ডান হাতের কবজি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের কক্সবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত জসিম উদ্দিনকে স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধার করে প্রথমে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখান থেকে অবস্থা গুরুতর বিবেচনায় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় আজ শনিবার ইউনিয়ন ও উপজেলা যুবলীগ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং নুরুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানানো হয়েছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দল ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
শুক্রবার বিকেলের দিকে নুরুল ইসলাম জসিমকে ফোন করে চরভূতা ইউনিয়নের কক্সবাজার এলাকায়আসতে বলেন। সন্ধ্যার দিকে জসিম সেখানে এলে নুরুলের সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নুরুল ইসলাম ধারালো রামদা বের করে কোপান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানান, জসিম উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম—দুজনই মাদক বিক্রি, সেবন ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। একসময় দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব, পরে বিরোধ সৃষ্টি হয়। একটি মুঠোফোন ছিনতাইকে কেন্দ্র তাঁদের মধ্যে সম্প্রতি বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুজন দুই দলে ভাগ হয়ে যান। শুক্রবার বিকেলের দিকে নুরুল ইসলাম জসিমকে ফোন করে চরভূতা ইউনিয়নের কক্সবাজার এলাকায় আসতে বলেন। সন্ধ্যার দিকে জসিম সেখানে এলে নুরুলের সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে নুরুল ইসলাম ধারালো রামদা বের করে তাঁকে কোপাতে উদ্যত হলে জসিম দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। নুরুলও পিছু ধাওয়া করলে জসিম একটি ফসলি জমির মধ্যে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এ সময় নুরুল ইসলাম প্রকাশ্যে কুপিয়ে ডান হাতের কবজি কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এ সময় জসিম উদ্দিনের চিৎকারের স্থানীয় মানুষ ছুটে এসে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
রোগীকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের কাছে আনা হয়েছিল। তাঁর ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।
মো. মহসিন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
জানতে চাইলে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. মহসিন আজ সন্ধ্যায় বিডিটাইপকে বলেন, রোগীকে (জসিম উদ্দিন) গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের কাছে আনা হয়েছিল। তাঁর ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁরা ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে আহতের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর মামাতো ভাই ও পার্শ্ববর্তী ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের আহ্বায়ক মো. রিয়াজ। আজ রাত পৌনে নয়টার দিকে তিনি বিডিটাইপকে বলেন, ডান হাতের কবজি তো আগেই বিচ্ছিন্ন হয়েছে, বাম হাতে কোপ লেগেছে। সেখানে ১৩টি সেলাই লেগেছে। শরীরের অন্যান্য স্থানে আরও নয়টি সেলাই লেগেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্ত দিয়ে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
রোববার এ বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে নুরুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আবু হোসেন, আহ্বায়ক, লালমোহন উপজেলা যুবলীগ
চরভূতা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মো. গোলাম সরোয়ার হাওলাদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নুরুল ইসলাম এ বছর সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। উপজেলা যুবলীগ ও তাঁরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। নুরুলকে আটক করার জন্য দল থেকে পুলিশকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়াও চলছে।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু হোসেন বলেন, রোববার এ বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে নুরুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবু হোসেন আরও বলেন, নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ তাঁরা শোনেননি। এ ঘটনার পর সেটি জেনেছেন তাঁরা।
ঘটনার পর থেকে যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জসিম উদ্দিনের কবজি কেটে ফেলার অভিযোগের বিষয়ে নুরুল ইসলামের মুঠোফোনেও ফোন দিলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিনতাই ও মারামারির তিনটি মামলা রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন