বরিশালে পুলিশের নির্যাতনে রেজাউল করিম রেজা (৩০) নামে আইন কলেজ থেকে পাশ করা ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দিবাগত রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহতর স্বজনরা। নিহত রেজাউল করিম রেজা বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ইউনুছ মুন্সীর ছেলে। তিনি সম্প্রতি বরিশাল ল’কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেছেন।
এর আগে ২৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় গেয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহি মাদকসহ রেজাউলকে গ্রেপ্তার করেন। ওই রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরের দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারে আসা কাগজে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ ছিলো।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখ রাত সাড়ে ১০টায় রেজাউলকে ১৩৬ গ্রাম গাঁজা ও ৪ অ্যাম্পুল নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ ডিবি পুলিশের এস আই মহিউদ্দিন মাহি গ্রেপ্তার করেন। ওইদিন রাত পৌনে ১২টায় তাকে কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর ও মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরের দিন ৩০ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। রাতে কারা অভ্যন্তরে রেজাউল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় শনিবার রাতে রেজাউল মারা যান।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বিডিটাইপক বলেন, রেজাউলকে নির্যাতন করা হয়েছিল কিনা তা ঠিক বলতে পারবো না। তবে ৩০ তারিখ এই আসামিকে রিসিভ করার সময়ে থানা থেকে দেওয়া কাগজপত্রে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি পা থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ সিকদার জানান, রক্তক্ষরণজনিত কারণে ১ তারিখ ৯টা ৩৫ মিনিটে পুরুষ সার্জারি ১ ইউনিটে তাকে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ।
নিহতর ফুপা তারেক মিয়া জানান, রেজাউলকে হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি। এসময় রেজাউলকে ধরে তানি দুজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানতে চান। রেজাউল কিছু জানেন না বলে জানালে এসআই মহিউদ্দিন নিজের গাড়ির কাছে যান এবং সেখান থেকে ফিরে রেজাউলের পকেটে হাত দিয়ে একটি নেশাজাতীয় ইনজেকশন পান বলে জানান এবং তাকে ধরে নিয়ে যান।
নিহতর বাবা ইউনুস মুন্সী বলেন, ঘটনাস্থলে এসে ছেলেকে ধরার কারণ জানতে চাইলে মহিউদ্দিন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেজাউলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন রেজাউল দিব্যি সুস্থ ছিলো। পরে জানতে পারি রেজাউলকে গাজাসহ আটক করা হয়েছে। এরপর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের ফোন করে জানানোন হয়, রেজাউল বাথরুমে পরে গেছে এবং তার ব্লিডিং হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রেজাউলের সাথে আমাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি।
রেজাউলের ভাই আজিজুল করিম বলেন, কোনো অপরাধ ছাড়াই রেজাউলকে ধরে নেয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে আরো দুই ব্যক্তিকে ফাঁসানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। রক্ত জমাট হয়েছে। বিশেষ করে দুই পায়ে স্পষ্ট জমাট রক্তের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। এতে নিঃসন্দেহে প্রমান করে পুলিশের অমানবিক নির্যাতনেই রেজাউলের মুত্যু হয়েছে।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আব্দুল কুদ্দুস জানান, এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হবে। লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিন মহির সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন তিনি। তার মুঠোফোনে বক্তব্য চেয়ে ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হলেও তার কোনো উত্তর দেননি এসআই মহিউদ্দিন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বিডিটাইপকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মাদকসহ আটকের পর আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে তাকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু স্বজনরা এখন একটা অভিযোগ করেছেন, সেহেতু বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ওই পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন