নরসিংদীতে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারার চেষ্টা

নরসিংদীতে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারার চেষ্টা প্রতীকী ছবি

নরসিংদী জেলার রায়পুরায় টিকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে প্রবাসীর ধর্ষণ শেষে আগুনে পাুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন। শনিবার (৭ আগস্ট) রাত ১০ টার দিকে উপজেলার উত্তরখার নগর ইউনিয়নের লোচনপুর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।

অগ্নিদগ্ধ পারভিন বেগম জানায়, উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামে দানা মিয়া তার মেয়ে পারভিন বেগমকে পারিবারিক সম্মতিতে মরজাল ইউনিয়নের পাহাড় মরজাল এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের সাথে বিয়ে দেয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পারভিন বেগমের স্বামী প্রবাসের থাকার কারণে প্রায় সময় শশুর বাড়ীর লোকজন পারভিন বেগম ও সন্তানের ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন করতো।

বছরখানেক পূর্বে পারভিন বেগমের দেবর আলী হোসেন পারভিনের সন্তানের পায়ে দা দিয়ে কোপ দেয়। নাতনীর পায়ে কোপ দেওয়ার ঘটনায় পারভিনের বাবা দানা মিয়া থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছিল। এর পর থেকে শশুরবাড়ীর লোকজন মামলা তুলে নিতে পারভিনের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল এবং নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে সে স্বামীর বাড়ী ছেড়ে বাবার বাড়ী সোবানপুরে গিয়ে উঠতে বাধ্য হয়।

এরই জের ধরে শনিবার টিকা দেওয়ার নাম করে পারভিনকে বাবার বাড়ী থেকে মরজাল শশুর বাড়ীতে ডেকে নিয়ে যায়। সম্প্রতি টিকা কার্যক্রম শুরু হলে পারভিনের শাশুড়ি ননদেরা টিকা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাকে। তাদের এই উৎসাহে ও ফোন পেয়ে সে শনিবার শশুর বাড়ী যায়।

বিকালে দেবর আলী হোসেন, ননদের ছেলে শাহরিয়ার, ননদ তাসলিমা বেগম ও জ্যা রহিমা বেগমের সাথে শশুর বাড়ী থেকে সিএনজি যোগে টিকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। সিনজিতে উঠে কিছুক্ষন পর তার চোখমুখ বেধে ফেলে। সন্ধ্যার পর তার দেবর কোন নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সিএনজি থেকে নামিয়ে তাকে ধর্ষণ করে বলে জানায় পারভিন বেগম। পরে আবার সিএনজিতে উঠিয়ে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে তার দেবর তরল জাতীয় কিছু শরিরে ঢেলে দিয়ে সিএনজি থেকে টেনে নিচে নামিয়ে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রায়পুরা-বারৈচা সড়কের পাশে লোচনপুর এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের পাশে অগ্নিদগ্ধ নারীর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। তার শরিরে পানি ঢালতে থাকে। এসময় মোবারক হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি সিএনজি যোগে তাকে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।

রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত সরকারী সার্জন ডা: এ.কে.এম. রেজাউল ইসলাম খান জানায়, পারভিন বেগমের শরিরে পায়ের আঙ্গুল থেকে গলা পর্যন্ত প্রায় ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় রাত ১ টার দিকে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পারভিন বেগম আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে ঘটনায় অভিযুক্ত দেবর আলী হোসেন ও ননদের ছেলে শাহরিয়ার কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রায়পুরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) গোবিন্দ সরকার বলেন, মামলা প্রক্রিয়াধীন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলী হোসেন ও শাহরিয়ার নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সত্য ঘটনা উৎঘাটনে তদন্ত চলছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password