রাজশাহীর পুঠিয়ায় পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাড়ি। অল্প খরচে আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন এই বাড়িতে বসবাস ইট-পাথরের বাড়ির চেয়ে বেশি আরামদায়ক হবে বলে দাবি বাড়ির মালিক আনোয়ার পারভেজের। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কথা শুনে প্রতিদিন আশপাশের উৎসুক জনতা ওই বাড়ি দেখতে আসছেন।
পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের গোটিয়া গ্রামে পরিত্যক্ত বোতলের দ্বারা বাড়িটি তৈরি হচ্ছে। খবির আলী মোল্লার ছেলে আনোয়ার পারভেজ বাড়িটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
বাড়ি নির্মাণে এমন ব্যতিক্রমী চিন্তার বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়ির মালিক আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজে যেতে হয়। এর আগে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা বাড়ি সিলেট ও কুমিল্লায় দেখতে পেয়েছি। সেখান থেকেই উৎসাহ জাগে। এরপর একজন স্থপতি বড় ভাইয়ের পরামর্শে আমি পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহের পর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, বোতলগুলো আমাদের উপজেলার পাশাপাশি নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকার ভাঙারির দোকান থেকে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে কিনে এনেছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-২ এর প্রজেক্ট ডিরেক্টর শাহরিয়ার রহমান বলেন, প্লাস্টিক বোতলের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ। বোতল এমনিতেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। পরিত্যক্ত বোতলগুলো দিয়ে নির্মাণ কাজ করলে পরিবেশগত দিক থেকে বেশ ভালো। আর বোতলের তৈরি বাড়ি ভূমিকম্প সহায়ক। এমন বাড়ি শীত-গরম সহনশীল হয়।
তিনি বলেন, বোতলের ভেতর বালু থাকায় বৈদ্যুতিক শটসার্কিট ও অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ঘর থাকবে দূষণমুক্ত।
আনোয়ারের বাবা খবির আলী মোল্লা বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। পরিবারে স্ত্রীসহ ৩ মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে স্বামীর বাড়ি চলে গেছে। ছেলে আনোয়ার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। ছেলে প্রথম যখন বোতল দিয়ে বাড়ি করবে বলেছে তখন অনেক টাকা লোকসান হবে ভেবে আমার মন খারাপ হয়েছিল। তবে বাড়ি তৈরির গুণগতমান জানার পর আর খারাপ লাগছে না।’
তিনি জানান, এখন আমাদের বাড়ি তৈরি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে। বাড়ি তৈরির অদ্ভুত কৌশল দেখে সবাই প্রশংসা করছেন, তাই অনেক ভালো লাগছে। সময় পেলে নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে আমিও কাজ করি। পরিবারের লোকজন মিলে বোতলের মধ্যে বালু ভর্তি করি, এতে কাজ এগিয়ে যায়।
বাড়িটির রাজমিস্ত্রি অর্থাৎ প্রধান নির্মাণ কারিগর নজরুল ইসলাম বলছেন, এ ধরনের কাজ আমার জীবনে প্রথম। প্রায় ১৮০০ স্কয়ার ফিটের এই বাড়ির মধ্যে থাকছে ৪টি বেডরুম, একটি ডায়নিং রুম, একটি রান্নাঘর ও পৃথক দু’টি বাথরুম। একতলা বিশিষ্ট এই বাড়িটি দৃষ্টিনন্দন করতে উপরে কারুকাজ সম্বলিত রঙিন টিন ব্যবহার করা হবে। আর এই বাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ হাজার বোতল লাগবে। এর মধ্যে ২ লিটার, ১ লিটার ও আধা লিটারের বিভিন্ন রং এর বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভালুকগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাকবীর হাসান বলেন, আমার জানামতে রাজশাহী জেলায় এটাই প্রথম বোতল দিয়ে বসবাসের জন্য বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। শুনেছি ওই বাড়ির নির্মাণ কাজ দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন সেখান। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই এলাকায় আনোয়ারের বাড়িটিই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন বাড়ি হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, লোকমুখে শুনেছি এই উপজেলায় প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে একটি বাড়ির নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ এখনও দেখা হয়নি, তবে সময় পেয়ে অবশ্যই বাড়িটির নির্মাণ কাজ দেখে আসব।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন