যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এশিয়ান-আমেরিকানদের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এশিয়ার লোকজন মহামারি করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী এমন অভিযোগ এনে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এশিয়ানবিরোধী হ্যাশট্যাগও ছড়িয়ে পড়ছে টুইটারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণা অনুসারে এই পরিস্থিতির জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দায়ী করা হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ট্রাম্প গত বছর তার এক টুইটে ‘চীনা ভাইরাস’ শব্দটি উল্লেখ করেন। এরপর থেকেই টুইটারে এশিয়ানবিরোধী হ্যাশট্যাগ ব্যবহার বেড়ে যায় কয়েক গুণ। একপর্যায়ে ট্রাম্পের ওই টুইটটি গোটা বিশ্বের কাছে এশিয়া ও এশিয়ানবিরোধী চল হয়ে দাঁড়ায়।
ট্রাম্পের ওই টুইটের স্ক্রিনশট এখনও সংরক্ষিত আছে আর্কাইভে। গত বছর তিনি এই টুইট করার পর অনেকেই সেটিকে ‘বর্ণবাদী’ বলে সমালোচনা করেন। এ ছাড়া ‘চীনা ভাইরাস’ শব্দটির সঙ্গে আরও অনেক এশিয়ানবিরোধী বিষয়বস্তু জড়িত রয়েছে বলেও মনে করছেন গবেষকরা। যা নিয়ে খোদ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বাইডেনের প্রশাসনে এশিয়ান বংশদ্ভূত কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বলেছেন, বর্ণবাদের ঘটনা আমেরিকাতে নতুন নয়। আগেও এ দেশের নাগরিকরা বিদেশিদের ভালো চোখে দেখত না। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো তাদের মধ্যে এই ঘৃণা বিদ্যমান।
এ অবস্থায় গত ১৬ মার্চ আটলান্টায় ২১ বছরের আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হয় আট জনের। তাদের মধ্যে ৬ জনই এশীয় বংশোদ্ভূত নারী। এ ঘটনার পর ১৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জর্জিয়া সফর করেছেন। তারা এশিয়ান-আমেরিকান জনসমাজ ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিদেশিদের ব্যাপারে আতঙ্ক থেকে সরে আসতে ও বর্ণবাদ রুখতে মার্কিনদের আহ্বান জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ঘৃণা আর বর্ণবাদের বিষাক্ততা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এ ধরনের গোঁড়ামি ও সহিংসতার সঙ্গে প্রায়ই নীরবতার সম্পর্ক থাকে। অবিলম্বে এশিয়া-বিদ্বেষ নিয়ে নীরবতা ভাঙতে হবে। প্রতিবাদ জানাতে হবে।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভূত বিদ্বেষ ও সহিংসতা রোধে গত মাসে কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন করা হয়, যা পাস করতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আইনের সুফল নিশ্চিত করতে হলে আমাদের নিজেদের মনোভাবও পাল্টাতে হবে। আমেরিকায় বিদ্বেষের স্থান নেই। এটি থামাতে হবে। আর এ বিষয়টি পুরোপুরিই আমাদের হাতে। আমরা সবাই মিলে এটি বন্ধ করতে পারি।
শুধু গত বছর অন্তত ৩ হাজার ৮০০ বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার হয়েছেন এশিয়ান আমেরিকানরা। এ ধরনের বর্ণবাদ ও বিদ্বেষ বন্ধে মার্কিনদের মানসিকতা পরিবর্তনের পরামর্শ বাইডেনসহ বিশ্লেষকদের।
সুত্রঃ সিবিএস
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন