গত পাঁচ বছরে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ায় সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করেছে চীন। যদিও চীনের সামগ্রিক রপ্তানি কমেছে। সুইডেনভিত্তিক এক গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালে চীনের অস্ত্র রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বৈশ্বিক অস্ত্র লেনদেনের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ‘ট্রেন্ডস ইন ইন্টারন্যাশনাল আর্মস ট্রান্সফার্স, ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে সুইডেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপ্রি (স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট)।
গবেষণা সংস্থাটি বলছে, আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিক্রি পরিস্থিতি বেশ স্থিতিশীল ছিল। এই স্থিতিশীলতার কারণ হলো, এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির রপ্তানি বাড়লেও রাশিয়া ও চীনের অস্ত্র রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধ শেষের পর এই প্রথম আমদানি ও রপ্তানি রেকর্ডের এত কাছাকাছি গেল। অবশ্য মহামারির কারণে সামনের বছরগুলোতে চিত্র পাল্টাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অস্ত্র আমদানিতে সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে মধ্যপ্রাচ্যে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে অস্ত্রের বাণিজ্য ২০১৫ থেকে ২০২০ সালে এর আগের পাঁচ বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এই পাঁচ বছরে বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হলো যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও চীন। অন্যদিকে পাঁচটি বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হলো সৌদি আরব, ভারত, মিশর, অস্ট্রেলিয়া ও চীন।
সিপ্রির গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব দেখে কিছু দেশ আগামী বছরগুলোতে তাদের অস্ত্র আমদানি পুনর্নির্ধারণ করতে পারে। তবে একই সময়ে, এমনকি ২০২০ সালে মহামারির চূড়ান্ত অবস্থার মধ্যেও বেশ কয়েকটি দেশ অস্ত্রের জন্য বড় বড় চুক্তি করেছে।
পাঁচ বছরের সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় রপ্তানি করেছে। ৯৬টি অঙ্গরাজ্যে অস্ত্র সরবরাহ করার পাশাপাশি বিশ্ব রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ৩৭ শতাংশ। মার্কিন অস্ত্র রপ্তানির ৪৭ শতাংশই গেছে মধ্যপ্রাচ্যে। এর মধ্যে সৌদি আরবেই কেবল গেছে ২৪ শতাংশ। ফ্রান্সের অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ, জার্মানির বেড়েছে ২১ শতাংশ। এ ছাড়া ইসরায়েল ও দক্ষিণ কোরিয়া—দুটি দেশই তাদের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। তবে দেশ দুটি বিশ্বমঞ্চে অস্ত্র রপ্তানিতে এখনো তুলনামূলকভাবে ছোট খেলোয়াড়।
২০১৬ থেকে ২০২০ সালে আগের পাঁচ বছরের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি আমদানি বাড়িয়েছে সৌদি আরব, মিসর ও কাতার। সৌদি আরবের বেড়েছে ৬১ শতাংশ, মিসরের ১৩৬ শতাংশ ও কাতারের ৩৬১ শতাংশ। এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলেও অস্ত্র আমদানি অনেক বেড়েছে, মোট আমদানির ৪২ শতাংশ হয়েছে এ অঞ্চলে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও পাকিস্তান এ অঞ্চলের বৃহত্তম আমদানিকারক ছিল।
অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের অস্ত্র রপ্তানি বেশ কমেছে। যদিও এ দুটি দেশ বেশি অস্ত্র সরবরাহ করে সাব সাহারান আফ্রিকায়। গত পাঁচ বছরে রাশিয়ার রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশ। কেবল ভারতেই কমেছে ৫৩ শতাংশ। যদিও রাশিয়া সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অঞ্চলের সঙ্গে নতুন অস্ত্র চুক্তি করেছে। দেশটির রপ্তানি সম্ভবত আগামী বছরগুলিতে ধীরে ধীরে আবার বাড়বে। অবশ্য বেশির ভাগ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে রাশিয়া।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন