জমির নেশা ছিল রুবেল-বরকতের। কোনো জমি পছন্দ হলেই মালিকের কাছ থেকে কম দামে কিনতেন, নয়তো জোর করে লিখে নিতেন। এভাবেই হাজার হাজার বিঘা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তারা। আর সাধারণ মানুষ জমি হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব।
মমিন ও বাবু দুই বন্ধু। ফরিদপুরে শেখ রাসেল শিশু পার্কের সামনে গাড়ির পার্সের ছোট্ট দোকান। অনেকদিনের জমানো টাকার সঙ্গে ধার নিয়ে প্রায় ২৬ লাখ টাকায় বাইপাস সড়কের পাশে ৫ দশমিক এক নয় শতাংশ জমি কিনেন। ইচ্ছা ছিল গাড়ির একটা গ্যারেজ বানাবেন দু’জন মিলে। পাশেই রুবেল-বরকতের জমি। একদিন ডেকে জানিয়ে দেয় মমিন ও বাবুর জমিও তাদের লাগবে।
ভুক্তভোগী জানান, ‘আমাদেরকে চাপ দিতে থাকে জমি লাগবে বলে। জমি আমাকে দিয়ে দাও এ কথা বলার পরদিন সকালে এসে দেখি ১০ ফুট দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলেছে আমার জমি।’
জমি লিখে নেয়ার কাহিনী বলেন বাবু। তিনি বলেন, ‘জমির সামনে শুধু দেয়াল দিয়েই থামেননি, জমি তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয় তারা। মন্ত্রীর পুরানো বাড়িতে আয় বলে তারা সেখানে যাবার পর বলে দলিলে সই কর। জীবন বাঁচানোর ভয়ে সই করে দিয়ে আসলাম। আমার বাড়ি লিখে নিল না ঘর লিখে নিল না-কী লিখে নিল আমি তা জানি না।’
ফরিদপুরের বাইপাস সড়কের রাস্তার দু’পাশের জমির মালিকদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতো। যারা বিক্রি করতেন তারাও সঠিক মূল্য পেতেন না। আর যারা রাজি হতেন না তাদের কাছ থেকে জোর করে জমি লিখে নিতেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের নামে হেবা দলিল হয়েছে ওই জমির। আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুবল সাহা জানান, ‘রক্তের সম্পর্কের মধ্যে হেবা দলিল করতে হবে। রক্তের সম্পর্কের বাইরে এটা হয় না। তবে এটা হয়ে থাকলে ভয়ে হয়েছে। আমি নিশ্চিত।
তবে জমির দলিল লেখার কথা অস্বীকার করেন দলিল লেখক। দলিল লেখক মোহাম্মদ আজহার আলী বলেন, ‘আমি লিখিনি। কাগজের ওপর নাম আছে না।’
আর ক্যামেরা দেখে ভূমি অফিস থেকে সটকে পড়েন রুবেল বরকতের হয়ে যারা দলিল লিখতেন। মমিন, বাবুর সাথে রুবেলের রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও কিভাবে দলিল করা হলো তা জানতে দুপুর দুইটায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। বার বার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।
তার অফিস দুইটায় শেষ বলে জানান অফিসের কর্মকর্তারা। অথচ মমিন, বাবুর জমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সন্ধ্যার সময়। পরদিন গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কথা বলতে সরকারের নিষেধাজ্ঞার অজুহাত দেখিয়ে মুখ খোলেননি।
এভাবে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় মানুষের জমি লিখে নিয়েছেন রুবেল বরকত ও তার বাহিনী। এখন পর্যন্ত রুবেল-বরকতের ২ হাজার ৪ শ ৫০ বিঘা সম্পত্তির হদিস পেয়েছে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন