মানচিত্র থেকে ধিরে ধিরে মুছে যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর। নদী ও সাগরবেষ্টিত ছোট এ দ্বিপ ইউনিয়নটি ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাসন উপজেলায় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে অবস্থিত।প্রবল ভাঙনে বিধ্বস্ত ঢালচর ইউনিয়নটি প্রায় ২শ’ বছর পূর্বে মেঘনা ও বঙ্গপোসাগরের বুকে জেগে ওঠে। আর এ চরটি এখন মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।এ চরের এক সময়ে মৎস আহরণের জন্য ব্যাপক নামডাক ছিল। আড়ৎ ও মাছের গদিগুলোয় ব্যাপক হাকডাক ছিল কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
কথা হয় স্থানীয় জেলে মো. নাসির মিয়া’র (৭২) সাথে। তিনি জানান, শৈশবে দৌলতখাঁন উপজেলার হাকিমুদ্দিনের ভাঙ্গণ কবলিত এলাকা থেকে পিতার সাথে আসেন ঢালচর। সেই থেকেই বাবার সাথে নদী ও সাগরে মৎস শিকার করেই কাটিয়ে দিয়েছেন যৌবনের ৬০ বছর। শেষ বয়সে এসে মেঘনা ও বঙ্গপোসাগরের করালগ্রাসে সহায়সম্বল ও জমিজমা হারিয়ে এখন পথে বসে গিয়েছেন তিনি।তিনি আরও বলেন, এক টুকরো ভূমি নেই যে, বুড়ো বয়সে ছেলে সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস করবো।
নদীর কিনারায় অবস্থিত চায়ের দোকানদার নুরুল ইসলাম ঝান্টু (৫০) বলেন, ৩৬ বছরে ১০বার নদীর ভাঙ্গণে আমার প্রায় ১৬০ শতাংশ জমি হাড়িয়ে এখন খুব অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছি। আমার দুই ছেলে, বড় ছেলেকে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছি ছোট ছেলেটাও পড়ছে। তবে এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ নদী ভাঙ্গণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আর তাই ঢালচর এখন দারিদ্রতায় হাহাকার করছে।
জানা গেছে দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভাঙ্গণে ভিটেমাটি হাড়িয়ে এ অঞ্চল ত্যাগ করে অন্য কোন জনপদে চলে যাচ্ছেন এখানকার অনেক পরিবার। অন্যত্র চলে যাওয়া এখন ধারাবাহিকতায় পৌছে গিয়েছে। তবে বেশিরভাগ নারীপুরুষ নতুন জেগে ওঠা চরসহ স্থানীয় তারুয়ার চরে গিয়ে আশ্রয় নিলেও সেখানকার বন বিভাগ তাদের যায়গা দিতে নারাজ।
এদিকে গত একবছরের ধারাবাহিক ভাঙ্গণে শতাধিকের বেশি বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রায় হাজার হেক্টর জমির শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বনাঞ্চল ও ফসলাধি বিলিন হয়ে গেছে মেঘনা ও বঙ্গপোসাগরের ঘোলাটে জলের পেটে।ইউপি চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার জানান, এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নেই কোন খাল যাতে করে এ অঞ্চলের ৯৮ ভাগ জেলে বন্যা ও জলচ্ছাসের সময় সাগর ও নদী থেকে খালে এসে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পাড়ে।
এছাড়াও দীর্ঘ বছরের ভাঙ্গণে দিশেহারা মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে হাজার হাজার একর জমি খালি পড়ে থাকা চর তারুয়া ও পূর্ব ঢালচরে এক টুকরো ভূমি পাচ্ছেনা চষাবাদসহ বসতী স্থাপনের জন্য।
তিনি আরও বলেন, খালি থাকবেনা এক শতাংশ জমিও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা থাকলেও হাজার একর জমি পড়ে আছে এসব চরে তবুও জনস্বার্থে চাষবাস করার অনুমতি মিলছেনা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের। অথচ গত এক বছরে ঢালচরবাসীর প্রায় ৫০একর জমি ও ২শতাধিকের বেশি বাড়িঘর এবং বনাঞ্চলসহ ব্যাপক ফসলাধি বিলিন হয়েছে নদীগর্ভে। বর্তমানে মাত্র ১২শ’ ১২ একর ৫২ শতাংশ জমি নিয়ে এ ঢালচরটি অনবরত ভাঙ্গণের মুখে রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, ঢালচর ইউনিয়নে ভাঙ্গণ কবলীত মানুষের জন্য ভূমী বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে এবং চরতারুয়া ও পূর্ব ঢালচরের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন