নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর মেহেরপাড়া ইউনিয়নে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় নয়ন মিয়া (৩২) নামে এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাহফূজ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে মাধবদী থানা পুলিশ।
বুধবার ১৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন মেহেরপাড়া ইউনিয়নের চৌয়া উত্তর পাড়া এলাকার আক্তার মিয়ার দোকানের সামনে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত নয়ন মিয়া চৌয়া উত্তর পাড়া এলাকার মানিক মিয়ার মেঝ ছেলে। সে পেশায় একজন ইট-বালু ব্যবসায়ী।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি শান্ত (২২) ও তার দলবল দীর্ঘদিন ধরে নয়নের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। কিন্তু নয়ন তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করে।
এরই জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় নয়ন ইট-বালু বিক্রির টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আক্তারের দোকানের সামনে পৌঁছলে ঘাতক শান্ত তার দলবল নিয়ে নয়নের উপর হামলা করে। এ সময় শান্ত তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে নয়নের বুকে ছুরিকাঘাত করলে নয়ন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে এলাকাবাসী নয়নকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী বলেন, বিগত ইউপি নির্বচনের পর থেকে এলাকার বখাটে ও ইয়াবা কারবারিরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা পর পর এলাকায় কয়েকটি মারধরের ঘটনা ঘটিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে।
থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আজকের এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর কারো মায়ের বুক যেন খালি না হয় সেজন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের ছোট ভাই হেলাল মিয়া বলেন,দেড় মাস পূর্বে শান্ত, আশু, বদু, রবিউল ও রহিজ তাদের বস মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আতাউর রহমানের নির্দেশে আমার ভাইকে তার মোটরসাইকেলসহ অপহরণ করে এক নির্জন স্থানে আটকে রেখে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে।
পরে তাদের লিডার আতাউরের মধ্যস্থতায় ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে ভাইকে ছেড়ে দেয়। পরে নয়ন ভাই ছাড়া পেয়ে এসে এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য তুহিন, পার্শ্ববর্তী ইউপি সদস্য দানা মিয়া ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিষয়টি জানায়। পরে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ভাইয়ের কাছ থেকে আর টাকা চাইবে না বলে আশ্বস্ত করে।
কিন্তু বিগত চার পাঁচদিন ধরে রবিউল পুনরায় চাঁদার টাকা চেয়ে বিরক্ত শুরু করে। চাঁদার টাকা না দিলে সে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এরই জের ধরে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ইট-বালু বিক্রির টাকা নিয়ে নয়ন ভাই বাড়ি ফেরার সময় শান্ত ৫-৭ জনের একটি দল নিয়ে ভাইয়ের পিছু নেয়। এ ঘটনা দেখে আমি দুর্ঘটনার আভাস আঁচ করতে পেরে দৌড়ে নয়ন ভাইয়ের কাছে পৌঁছার আগেই শান্ত তার সাথে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ভাইয়ের বুকে আঘাত করে এতে মুহূর্তেই নয়ন ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
আমি শান্তকে ধরতে গেলে সে আমাকে সজোরে আঘাত করে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নয়ন ভাইকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় ভাই রতন মিয়া বলেন, এর পূর্বে তারা আমাকেও একাধিকবার চাঁদার জন্য মারধর করেছে। আজ তারা আমার ভাইকে হত্যা করে আমার দুটি মাসুম ভাতিজাকে এতিম করে দিয়েছে। এভাবে সন্ত্রাসীদের রাজত্ব আর কতদিন চলবে? প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ঘুম কি আর ভাঙবে না? এ সময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কাছে খবর আসার সাথে সাথে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এর কারণ উদঘাটন করতে সক্ষম হই। কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে জানতে পারি ঘটনার মূল হোতা শান্ত দীর্ঘদিন ধরে ইট-বালু ব্যবসায়ী নয়নের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার আধা ঘণ্টার মধ্যে মাহফুজ নামে এক জনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। ঘটনার মূল হোতা শান্তসহ সবাইকে অতি শীঘ্রই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনার মূল হোতা শান্ত ছাড়াও এর সাথে যারা যারা জড়িত আছে তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন