রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অর্থোপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইচ রবিন ও তার স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এগারো বছর বয়সী গৃহকর্মীকে ছয় মাস ধরে নির্যাতনের ঘটনায় শনিবার দুপুরে নির্যাতিত শিশুর চাচা তপন বাড়ৈ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার ওসি জিয়াউল আহসান। তিনি বলেন, ডা. সিএইচ রবিন, তার স্ত্রী শিখা সাহা ও চেম্বারের সহযোগী বাসু হালদারকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এদিকে ডাক্তার সিএইচ রবিনের বিভিন্ন লোক মারফত নির্যাতিত শিশুটির পরিবারকে হুমকি দেওয়ায় আহত নিপা বাড়ৈসহ পালিয়ে যান স্বজনরা। এর ২২ ঘণ্টা পর শনিবার ভোর ৪টার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিত নিপা বাড়ৈর চাচা তপন বাড়ৈর শ্বশুর বিমলের বাড়ি আগৈলঝাড়া থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
ওসি জিয়াউল আহসান বলেন,নিপার চাচি মুক্তি বাড়ৈ আমাদের জানিয়েছেন বিভিন্নজনের হুমকিতে তারা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছিলেন।এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শামসুদ্দোহা তৌহিদ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, নির্যাতিত শিশু নিপা বাড়ৈর জ্যাঠিমা মুক্তি বাড়ৈর মোবাইলে বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হুমকিতে খুব ভোরে তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। মূলত আতঙ্কিত হয়েই তারা এ কাজ করতে পারেন।
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শামসুদ্দোহা তৌহিদ বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চাচা পরিচয়ে এক ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার শিশু নিপাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালায়। তবে শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় পুলিশকে না জানিয়ে তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে রাজি হয়নি। পরে ভোর ৫টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই শিশুটি এবং তার সঙ্গে থাকা বড় মা পরিচয়দানকারী নারীকে আর দেখা যায়নি। শেষে দুপুরে সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অর্থোপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইচ রবিনের বাসায় ছয় মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে নেওয়া হয় বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের প্রতিবন্ধী ননী বাড়ৈর ১১ বছর বয়সী মেয়ে নিপা বাড়ৈকে।
সেখানে ডা. সিএইচ রবিনের স্ত্রী শিখা সাহা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের পর শিশুটিকে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টার দিকে ডা. সিএইচ রবিনের চেম্বারের সহযোগী বাসু হালদারকে দিয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ নিপা বাড়ৈকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখান থেকে নিরুদ্দেশ অতঃপর পুলিশের চেষ্টায় উদ্ধারের পর চিকিৎসক সিএইচ রবিনের পরিবারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন