মহাপরিকল্পনায় কক্সবাজারঃ হতে চলেছে এক অর্থনৈতিক গেম-চেঞ্জার!

দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের মধ্যেও বঙ্গোপসাগর তীরের এ উপকূলীয় অংশকে সিঙ্গাপুর বা হংকং শহরের মতো গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনার কাজ পুরোদমে চলছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের জেলা কক্সবাজারের ৭৭টি সাইটে এক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা গুঞ্জন তুলছে অবকাঠামো নির্মাণ যন্ত্রের গতিবিধি।


উপর থেকে দেখা যাবে মুক্তার রঙে ঝিনুকের মতো। সাগর ছোঁয়া রানওয়েতে দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই উঠানামা করবে বিমান- এমন রূপে সাজছে পর্যটনখাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।


নীল-সাদা সাগর ও আকাশে মেঘের সঙ্গে মিতালী পাতা সুউচ্চ পাহাড়সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর লীলাভূমি কক্সবাজারের পর্যটনের বিকাশ ও গভীরসমুদ্র বন্দর কেন্দ্রিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগও স্থাপন হচ্ছে। এক বছর পর এটি চালু হলে পর্যটন নগরীর সঙ্গে অবিরাম যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু সড়কপথের ওপর আর নির্ভর করবে না।


কেবল যোগাযোগ অবকাঠামোই নয়, দেশের অর্থনীতির প্রধান গেম চেঞ্জার হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর- বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণ হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। বাংলাদেশের প্রধান আমদানিস্থল চীনসহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যে মেলবন্ধনের নিয়ামক হয়ে উঠবে জাপানের কাশিমা বন্দরের আদলে হতে যাওয়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।


১৯৬২ সালে যখন কাশিমা বন্দর স্থাপনের কাজ শুরু হয়, তখন ওই এলাকাটি ছিল ধানক্ষেত। বন্দর নির্মাণের পর সেটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরও এমন বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, হংকরংসহ দ্বীপভিত্তিক অর্থনৈতিক হাবগুলোর আদলে গড়ে তুলতে কক্সবাজার ঘিরে এক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেল সংযোগ, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বৈদ্যুতিক হাব গড়ে তোলার পাশাপাশি কক্সবাজারে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম দ্বীপভিত্তিক পর্যটন পার্ক।


পর্যটন ও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা সত্বেও স্বাধীনতার পর থেকেই জেলাটি ছিল অবহেলিত। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকাই নিয়তি ছিল উপকূল জেলাটির বাসিন্দারের। ২০০৯ সালে কক্সবাজারের পর্যটন ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করছে সরকার।


কক্সবাজার ঘিরে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিমানবন্দর, রেললাইন, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এসপিএম প্রকল্প, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল এক এক করে ২০২৩ সালের মধ্যে চালু জলে পাল্টে যাবে কক্সবাজারের চিত্র। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে মহেশখালী ইকোনমিক জোন দ্বীপভিত্তিক বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ নেবে।   


কক্সবাজারের দূর্গম দ্বীপ মাতারবাড়িতে ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ল্যান্ডবেইজ এলএনজি টার্মিনাল, চারটি বিশেষ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা এবং ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন স্থাপনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল কর্মযজ্ঞ অঞ্চলটিকে ইতোমধ্যেই জাপান, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য আকষর্ণীয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।


কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রিক বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করতে সাবরাং, নাফ ও সোনাদীয়ায় তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের কাজও চলছে। স্বাধীনতার পর অবকাঠামো ও বিনিয়োগে পিঁছিয়ে থাকা দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান কক্সবাজরজুড়ে প্রায় ২৫টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৭টি বাস্তবায়নের কাজ চলছে, যা পাল্টে দেবে জেলার রূপচিত্র।


এসব প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি, যা এক বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের মোট বরাদ্দ দেওয়া অর্থের দেড় গুণ। গত জুন মাসে সরেজমিন বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলায় জাপানী নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা ও চলমান কোভিড মহামারীর স্থবিরতা কাটিয়ে বেশিরভাগ প্রকল্পেই দিন-রাত কাজ চলছে, ক্ষণে ক্ষণে কক্সবাজারের পাল্টে যাওয়ার চিত্র বুনন হচ্ছে।


বেজার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কক্সবাজারের ঘিরে সরকারের যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে, এগুলো বাস্তবায়ন হলে আধুনিক পর্যটন ও বৃহৎ অংকের বিনিয়োগে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই সাবরাং থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত পুরোপুরি বদলে যাবে।


তিনি বলেন, মহেশখালীর ধলঘাটায় বেজার ৪০০০ একরের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে। সেখানে টিকে গ্রুপ পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও এলপিজি টার্মিনাল করার জন্য বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ইতোমধ্যে ২৫০ একরের জমি ডেভেলপ করেছে। এর পাশেই গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। ফলে ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বেশকিছু কোম্পানি জমির জন্য আবেদন করে রেখেছে।


তবে বিপুল এই বিনিয়োগ দৃশ্যমান হতে দু'-তিন বছর সময় লাগবে জানিয়ে পবন চৌধুরী বলেন, মহেশখালী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় একে দেশের মূল ভু-খন্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সড়ক চালু হলে এবং মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র জেনারেশনে এলে তখন দেশি-বিদেশি ইন্ডাস্ট্রিগুলো বিনিয়োগ কাজ শুরু করতে পারবে। এজন্য মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি (এমআইডিআই) কাজ করছে।


কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কক্সবাজার জেলায় যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাতে আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যেই অঞ্চলটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার ও কুনমিং হয়ে এশিয়ান হাইওয়েতে সম্পৃক্ত হওয়াও সহজ হবে।


তিনি বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র, ও ইকোনমিক জোনকেন্দ্রিক মাল্টিবিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে, যার বড় অংশই আসবে দেশি-বিদেশি বড় বড় কোম্পানি থেকে। এই উন্নয়ন যাত্রায় কক্সবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করতে হলে ব্যাংকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তুলতে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।


'আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে মহেশখালী ও টেকনাফে বিপুল বিনিয়াগ হলে দক্ষ জনশক্তিরও দরকার হবে। কিন্তু কোনখাতে কি পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি লাগবে, তার কোন হিসাব সরকার থেকে এখনও দেওয়া হচ্ছে না। আগে থেকে এ তথ্য পাওয়া গেলে স্থানীয় শিক্ষিত তরুণরা এখন থেকেই নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিতে পারে'- যোগ করেন তিনি।  


🚩কমিশনিং হলেই ২৪ ঘন্টা চলবে বিমানঃ


সড়কপথ ছাড়া কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ সার্বক্ষণিক কোন বিকল্প নেই। ব্রিটিশ আমলে গড়ে উঠা বিমানবন্দরটি এক সময় অকেজো ছিল। পর্যটনে খরা দেখা দিলে সেখানে বিমান উঠানামা বন্ধ হয়ে যেত। এখনও দিনের আলো নিভে গেলে অচল পড়ে হয়ে পরে বিমানবন্দরটি। 


এই বিমানবন্দরে ২৪ ঘন্টাই বিমান উঠানামার ব্যবস্থা করতে লোকালাইজার, ভিওআর, জিপি স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনিং হলেই সেখানে সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা বিমান উঠানামা করতে পারবে। চলমান আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ ৪০ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরই কক্সবাজারকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ ওই বছরই কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১১৯৩.৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা সরাসরি কক্সবাজারে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। জ্বালানি হাব হিসেবে ফুয়েল নিতে এখানে অবতরণ করবে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এয়ারলাইন্সগুলো। বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত প্রকৌশলীরা জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নের অংশ হিসেবে চলমান আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ ৪০ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এটি নির্মাণ সম্পন্ন হবে। নতুন করে পৃথক অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনও স্থাপন করা হবে।


কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের ৬৭৭৫ ফুট হতে ৯০০০ ফুটে উন্নীত করায় সুপরিসর বিমান উঠানামা করতে পারছে। রানওয়ের প্রস্থ ১২৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৪৭ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, সুপরিসর বিমান পার্কিংয়ের জন্য এপ্রোন নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে আকাশপথে যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বভৌম রক্ষায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানগুলোও সার্বক্ষণিক উঠানামা করতে পারবে। আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে রূপান্তর করতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯০০০ ফুট হতে ১০৭০০ ফুটে উন্নীত করতে আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে মাতারবাড়ি অংশে বঙ্গোপসাগরের একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে। সমুদ্রের ওপরে ১৭০০ ফুট রানওয়ে নির্মাণ করা হবে, যা পরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বাড়ানো যাবে। এই অংশের কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর হতে সকল ধরণের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা এবং সব ধরণের বিমান উঠানামা করতে পারবে।


🚩চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু হবে ২০২২ সালেঃ


কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য আরামদায়ক, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে প্রকল্পের এর অর্ধেকেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে দোহাজারী-কক্সবাজার অংশে কাজ সম্পন্ন হয়েছে আরও বেশি, কিছু এলাকায় রেললাইনের পাতও বসে গেছে। জমি অধিগ্রহণজনিত জটিলতার কারণে শুরুর দিকে স্থবিরতা ও করোনা সংক্রমণজনিত কারণে কাজে বিলম্ব হলেও প্রকল্পটির কাজে এখন গতি এসেছে। লক্ষমাত্রা অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরে এ লাইন চালু হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শুটকি, লবন, রাবার, মাছ স্বল্প খরচে সারাদেশে পরিবহন করা যাবে। ২০০৯ সালে সরকার এ রেললাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও কক্সবাজারকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।


প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে আইকনিক স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ৯টি স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণসহ ৩৯টি ব্রিজ, ১৪৫টি কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণীর ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। গত ১৪ জানুয়ারি এই প্রকল্পের আওতায় একটি আইকনিক রেল স্টেশন বিল্ডিংয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। দেশের সর্বাধুনিক এই স্টেশনে আবাসিক হোটেল, ফুডকোর্ট, বাচ্চাদের খেলার জায়গা থাকছে। ৬ তলা বিশিষ্ট ঝিনুককৃতির স্টেশনটিতে ৩টি প্লাটফর্ম থাকবে, ৪০০ গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা থাকবে।


🚩গভীর সমুদ্রবন্দরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যয় কমবে ১৫ শতাংশঃ


বাংলাদেশের বেশিরভাগ আমদানি পণ্য মাদার ভেসেলে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, হংকং বা মালয়েশিয়ায় পৌঁছে। সেখান থেকে লাইটার ভেসেলে তা আসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়ন হলে যে কোন দেশ থেকে মাদারভেসেল এ বন্দরে নোঙর করতে পারবে। আর মাতারবাড়ি থেকে লাইটার ভেসেলে চট্টগ্রাম বন্দর ও বে-টার্মিনালে পৌঁছবে পণ্য। এতে সময় ও খরচ কমবে, পণ্য পরিবহনে গতি বাড়বে। ভাগ্যবদলের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে ১৬ মিটার ড্রাফটের কৃত্রিম চ্যানেল। সাগরের বুক চিরে তৈরি করা এই চ্যানেল স্বপ্ন দেখাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বড় বাণিজ্যিক হাব হয়ে উঠার। এই চ্যানেলটি আরও ১০০ মিটার এক্সটেনশন করে বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হবে। ১ লাখ ১৫ হাজার টন মালবাহী বিশাল মাদারভেসেলও এই বন্দরে ভিড়তে পারবে। গত বছরের মার্চে মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পায়। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটের যে স্থানটিতে মাল্টিপারপাস গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি আগে ছিল লবণমাঠ।


বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খননযন্ত্র 'ক্যাসিওপিয়া–ফাইভ' বালু–মাটি খুঁড়ে সেই লবণমাঠ খনন করে বানানো হয়েছে জাহাজ চলাচলের কৃত্রিম নৌপথ বা চ্যানেল। ঢেউ আর পলি জমা ঠেকাতে সাগরের দিকে নৌপথের দুই পাশে পাথর ফেলে তৈরি হয়েছে স্রোত প্রতিরোধক বাঁধ। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন গড়ে প্রতিটি জাহাজে ১ হাজার ৮৭৮টি কনটেইনার পণ্য আনা-নেওয়া হয়। মাতারবাড়ীতে চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলকারী চারটি জাহাজের সমান কনটেইনার আনা-নেওয়া করা যাবে এক জাহাজে। বন্দর সুবিধা অনুযায়ী ১৪-১৫ হাজার একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এতে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় ১৫% কমবে। মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনায় প্রথম ধাপে রয়েছে দুটি টার্মিনাল। সাধারণ পণ্যবাহী ও কনটেইনার টার্মিনালে বড় জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) ভিড়তে পারবে, যেটি এখন বাংলাদেশের কোনো বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। প্রথম ধাপে বন্দর ও পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক নির্মাণসহ খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৬ সাল। দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত হবে তিনটি কনটেইনার টার্মিনাল। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে টার্মিনাল।


🚩দেশের বিদ্যুৎ হাব মাতারবাড়িঃ


মাতারবাড়ির সমুদ্রতটের যেসব জমিতে আগে শুধুই লবণ চাষ হতো, সেখানেই গড়ে উঠছে ৩৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কেন্দ্র বাস্তবায়নে দূর্গম মহেশখালীতে চলছে দিন-রাতের বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। ১২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট এর দু'টি ইউনিটই ২০২৩ সালে কমিশনিং হবে। এটি জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এটি সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানান, মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বয়লার স্থাপনের কাজ চলছে। কয়লাবাহী মাদারভেসেল নোঙর করার একটি জেটি আগেই নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে গত বছরের ডিসেম্বরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রথমবারের মতো নোঙর করে ইন্দোনেশিয়ার পাতাকাবাহি জাহাজ ভেনেসা ট্রায়াম্প। তেলবাহী মাদারভেসেলের জন্য পৃথক একটি জেটি নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, যা আগামী জুলাই মাসে চালু হবে। এরই অংশ হিসেবে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার লম্বা চ্যানেল খনন কাজ শেষ হয়েছে। 


কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী চিন্ময় চন্দ বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎ হাব প্রতিষ্ঠার জন্য নৌপথ খনন করে কয়লা ও জ্বালানি তেল খালাসের জন্য দু'টি জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। একই চ্যানেল ব্যবহারের সুবিধা কাজে লাগিয়ে মাতারবাড়ী বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের পথও সুগম হয়েছে। মাতারবাড়ির কোহেলিয়া নদীর অন্যপাশে জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে সিপিজিসিবিএল ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, ১২৯২ একর জমির জমিতে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষে ভূমি উন্নয়ন ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত সপ্তাহে যে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন, এ দুটি কেন্দ্রও ওই তালিকায় রয়েছে। তবে ১৯০০ মেগাওয়াটের এই দু'টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এলএনজি বা ডিজেল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।


🚩এসপিএম চালু হবে আগামী জুনেঃ


কর্ণফুলী নদীতে নাব্য সংকটের কারণে তেলবাহী মাদার ভেসেল চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। এক লাখ টন তেল নিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ সীমানায় আসতে পারে জ্বালানিবাহী বড় জাহাজ। পরে ছোট ছোট অয়েল ট্যাঙ্কারে করে তা ইস্টার্ন রিফাইনারির জেটিতে আনা হয়। এতে এক লাখ টন তেল খালাশ করতে ১১ দিন সময় লাগে। একই অবস্থা ৩০ হাজার টন ডিজেলবাহী কার্গোর ক্ষেত্রেও। এই পরিমাণ ডিজেল ডিসচার্জ করতে ৪.৫ দিন সময় লাগে।

গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় 'ইনস্টলেশন অব সিংগেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন' শীর্ষক প্রকল্প হাতে সেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি চীন পিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক চুক্তিও স্বাক্ষর হয়। ৬,৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে।


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় তিনটি হাইস্পিড ডিজেল ও তিনটি ক্রুড অয়েল স্টোরেজ নির্মাণের বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গভীর সমুদ্রের মাদার ভেসেল থেকে দু'টি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল এসব স্টোরেজে আসবে। পরে স্টোরেজ থেকে পৃথক দু'টি পাইপলাইনে ইস্টার্ণ রিফাইনারির চট্টগ্রামের আনোয়ারা ডিপোতে যাবে। ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ দু'টি পাইপলাইন আনোয়ারার ডিপোকে টার্মিনাল স্টোরেজের সঙ্গে যুক্ত করবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১.২ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহনে মাত্র ৪৮ ঘন্টা সময় লাগবে। এতে বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার তোলগে মিজ্জাক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।


🚩ল্যান্ডবেইজড এলএনজি টার্মিনালঃ


গ্যাস সংকট কাটাতে ২০১৮ এর এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ১.৩৬ লাখ ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে বেলজিয়ামের পতাকাবাহী জাহাজ এক্সিলেন্স বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নোঙ্গর করে। তারপর থেকে দেশে আমদানি করা এলএনজির চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে দু'টি ভাসমান টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে জাতীয় গ্যাস পাইপলাইনে। মহেশখালী চ্যানেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট এর একটি ভাসমান টার্মিনাল চালু হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় মাতারবাড়ির ধলঘাটে ল্যান্ডবেজড স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ১০০০ এমএমসিএফডি রিগ্যাসিফিকেশন ক্যাপাসিটির এই প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ডিসেম্বরে দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা বলছে, ২০২৫ সালে দেশের প্রথম স্থায়ী টার্মিনাল উৎপাদনে আসবে।


🚩বিলাসী পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়ায়ঃ


প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে ভরপুর কক্সবাজার দেশের পর্যটন বিজ্ঞাপনের পোস্টার গার্ল। সমুদ্র, ঝাউবন, ঝর্ণা আর দিগন্ত ছোঁয়া পাহাড়ের রূপ দেখতে প্রতিবছর ৬০-৭০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। তবে এদের মধ্যে বিদেশির সংখ্যা খুবই কম। এবার বিদেশিদের আকৃষ্ট করতেই ঢেলে সাজানো হচ্ছে টেকনাফের সাবরাং, নাফ ও মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ। প্রকৃতির সহজতার সঙ্গে মানুষের নান্দনিক চিন্তার মিশ্রণে দেশে প্রথম দ্বীপভিত্তিক পর্যটন নির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি।


সাবরাং এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটন অঞ্চলটিকে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৫ ফুট উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। চলছে ভূমি উন্নয়ন ও সীমানাদেয়াল নির্মাণের কাজ। গত জুনে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে আইকোনিক ফটো কর্নার উদ্বোধন করেছেন বেজার তৎকালীন নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। সাবরাং- এ দেশের প্রথম ট্যুরিজম পার্ক কক্সবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ৫ তারকা হোটেল, ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন এ্যকুরিয়াম ও সি-ক্রুজ, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা, সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের বিশেষ ব্যবস্থা, ভাসমান জেটি, শিশু পার্ক, ইকো-কটেজ, ওশেনেরিয়াম, আন্ডার ওয়াটার রেস্টুরেন্ট, ভাসমান রেস্টুরেন্টসহ নানা রকমের বিনোদনের সুবিধা থাকবে।


সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক প্রতিষ্ঠায় গত অক্টোবরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইন্টার এশিয়া গ্রুপ প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ভূমি ইজারা চুক্তি সই করেছে বেজা। এই পার্কে অত্যাধুনিক ৫ তারকা হোটেল নির্মাণ করতে বেসরকারি কোম্পানি সানসেট বে লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে জানুয়ারিতে। অত্যাধুনিক আবাসিক সুবিধার ১০তলা বিশিষ্ট এ হোটেল নির্মাণ ১৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী সাতটি কোম্পানির সঙ্গে জমি ইজারার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে হোটেল তৈরির কাজ শুরু করেছে। ১০৪৭ একর জমিতে এই পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ৩৯ হাজার পর্যটক উপভোগ করতে পারবে, ১১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এখানে।


এছাড়া, টেকনাফ শহরের অদূরে নাফ নদীর মোহনায় জালিয়ার দ্বীপ ঘীরে নাফ টুরিজম পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। মূলত বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে মালদ্বীপ, থাইল্যান্ডের মতো ইকো কটেজ, লাইফ এন্টারটেইনমেন্ট থিয়েটার, মেগা শপিং মল, সিনেমা হল, গলফ ক্লাব, ওয়াটার স্পোর্টস বিচসহ নানা আয়োজন থাকবে এই পার্কে। সন্ধ্যায় নিয়ন আলোয় থাকবে ক্যাম্প করার ব্যবস্থা। দেশে প্রথমবারের মতো কেবল কার যুক্ত হবে এই টুরিজম পার্কে। উপর থেকে পুরো দ্বীপের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এক মাথা থেকে অন্য মাথায় ছুটে যাবেন পর্যটকরা। থাকবে ঝুলন্ত সেতুও। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে এই পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়ন হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে নাফ টুরিজম পার্কের কাজ শেষ হলে কর্মসংস্থান হবে ১২ হাজার মানুষের। বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান সিয়াম সিয়াম ইন্টারন্যাশনাল এখানে ৪০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছে। এর আগে জার্মানভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নাফ টুরিজম পাবের্কর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা করা হয়।


এছাড়া, সমুদ্রদ্বীপ সোনাদিয়ায় ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেজা। ৮৯৬৭ একর জায়গা জুড়ে ৯ বছর ধরে ধাপে ধাপে পার্কটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সোনাদিয়া দ্বীপের মোট জমির পরিমাণ ৯৪৬৭ একর, যা ২০১৭ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন হতে বন্দোবস্ত নিয়েছে বেজা। এই দ্বীপে টুরিজম পার্ক প্রতিষ্ঠায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এই দ্বীপের দীর্ঘ বালুকাময় সমুদ্রতীর, ঝাউবনের মনমাতানো ঝিরিঝিরি শব্দ, দৃষ্টিনন্দন লাল কাকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং সূর্যোদয় ও সুর্যাস্ত দেখার সুযোগ থাকছে।


ট্যুরিজম পার্কগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সম্পর্কে পবন চৌধুরী বলেন, সাবরাংয়ে এখন যা দেখা যাচ্ছে, তা পরিকল্পনার তুলনায় নগণ্য। এটি বাস্তবায়নে সমুদ্রের পাড় ধরে ৫ কিলোমিটার লাইটিং করা হয়েছে। রাস্তা নির্মাণ ও বাউন্ডারি নির্মাণে স্থানীয় দরপত্র এবং ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সাবরাং বাংলাদেশের বেস্ট জায়গায় রূপান্তর হবে।

সোনাদীয়ায় দ্বীপের খাস জমি বসবাসরতদের পুনবার্সনে ৪০ একর জমি ডেভেলপ করা হয়েছে, তাদের দ্বারা বায়ো-ডাইভারসিটি যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য সব ধরণের কমিউনিটি লাইফ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এই দ্বীপে ১০ হাজার একর জুড়ে ইকো ট্যুরিজম পার্ক হবে। সীমিত সংখ্যক পর্যটকও যেতে পারবে। এ জন্য মাস্টারপ্ল্যান ও সমীক্ষা হয়ে গেছে।


নাফ ও সাবরাংয়ে খাওয়ার পানির সমস্যার কথা জানিয়ে পবন চৌধুরী বলেন, উখিয়াতে পানির দুটি সোর্স চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখান থেকে পানি আনতে সমীক্ষা করতে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে। বর্ষাকালের পানি ট্রিটমেন্ট করে ব্যবহার উপযোগী করা ও ডিস্যালাইজেশন নিয়েও কাজ চলছে।


তথ্য : The Business Standard 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password