গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মেয়ের জামাইয়ের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বিধবা শাশুড়ি মোছাঃ খোরশেদা বেগমের (৬৫) বসতঘর।
সোমবার (১৬ আগষ্ট) দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিধবা শাশুড়ির ছোট মেয়ে মোসাঃ সুরভী আক্তারের (২০) জামাইয়ের দেয়া আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে ঘরের ভেতর থাকা সকল আসবাবপত্র ও টাকা-পয়সাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর পূর্বে পারিবারিক ভাবে খোরশেদা বেগমের ছোট মেয়ে সুরভী আক্তারের বিয়ে হয়। পার্শবর্তী নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার দত্তেরগাঁও ভিটিপাড়া গ্রামের যুবক মোঃ রাশেদ খানের (৩০) সঙ্গে। বিয়ের পর রাশেদ-সুরভী দম্পতির ঘর আলোকিত করে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সুরভীর স্বামী রাশেদ খান মাদকাসক্ত হওয়ায় সব সময়ই সংসারে অশান্তি ও ঝগড়া লেগে থাকতো। মাদক কেনার টাকার জন্য তার স্ত্রীকে ভীষণ মারধর করতো। এরই সূত্র ধরে মেয়ের বয়স আড়াই থেকে তিন বছর হলে, স্বামীর অত্যাচারের মাত্রা বেশি হওয়ায় আর সইতে না পেরে তার কন্যা সন্তানকে রেখেই বাপের বাড়ি চলে আসে। এরমধ্যে কয়েকবার রাশেদ তার মেয়েকেসহ শ^শুড়বাড়িতে এসে স্ত্রী সুরভীকে মারধর করে যায়। সেই সাথে মেয়েকেও রেখে যায়। এভাবে ৬ মাস পার হওয়ার পর সে (সুরভী) নিজে থেকেই স্বামীকে ডিভোর্স দেয়।
ডিভোর্স দেওয়ার পরে সুরভী আক্তার গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি নেয়। পরে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। অন্যদিকে সুরভীর সাবেক স্বামী রাশেদ খানও অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। সৎ মায়ের ঘরে তার নিজের মেয়েকে নিরাপদ নয় ভেবেই মেয়েকে তার নানু বাড়িতে দিয়ে যায়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে গত কোরবানীর ঈদের সময়ই। সুরভীর বাপের বাড়ি থেকে মেয়েকে তার নিকট নিয়ে যায়। আর এই নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া।
এরই সূত্র ধরে সোমবার রাত ১২ টার দিকে সুরভীকে ফোন দিয়ে বলে তোদের বাড়িতে যাচ্ছি আর আগুন লাগিয়ে দিয়ে সবকিছু ছাড়খাড় করে দিবো। সুরভী তখনই তার মাকে এ বিষয়টি জানালে বৃদ্ধ মা রাত ১টার সময় অন্যবাড়িতে চলে যায়। সে বাড়ি এসে কাউকে না পেয়ে পেট্টোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে আবার ফোন করে বলে মাত্র তোদের বাড়ি পুড়েছি। প্রয়োজনে তোদের সবাইকে খুন করবো।
একপর্যায়ে তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছোটে এসে দেখে ঘরটি পুরোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চুনি লাল দাশ জানান, মনে হচ্ছে পেট্টোল দিয়ে আগুন দিয়েছে। আর এঘটনা তার (সুরভী) সাবেক স্বামীর পূর্ব-পরিকল্পিত। অভিভাবকহীন এ পরিবারটির সবকিছুই শেষ করে দিয়েছে তার সাবেক মেয়ের জামাই।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহাদাত হোসেন মাষ্টার মুঠোফোনে জানান, খবর পেয়ে সকালেই ছুটে এসেছি। এ বিষয়টি আমাকে ভীষণ ভাবে মর্মাহত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাপাসিয়া থানার আড়াল তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ মোঃ অহিদুজ্জামান জানান, এখনো পরিবার থেকে কোন অভিযোগ আসে নাই। অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন