ট্রাকেই খাওয়া-দাওয়া-বিশ্রাম ও নামাজ ২৩ দিন ধরে

ট্রাকেই খাওয়া-দাওয়া-বিশ্রাম ও নামাজ ২৩ দিন ধরে
ইজাহার আলী (৬০) এখন বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রীর কথা মনে করে সারাক্ষণই চোখের পানি ফেলেন আর আল্লাহকে ডাকেন। দুই দিনের কথা বলে ২৩ দিনেও বাড়িতে ফিরতে পারেননি ইজাহার। আর কবে নাগাদ ফিরতে পারবেন সেটিও জানেন না। ট্রাকেই খাওয়া-দাওয়া-বিশ্রাম আর নামাজ কালাম পড়ে দিন পার করছেন তিনি।শুধু ইজাহার আলীই নন তার মতো আরও ৬০ জন ট্রাক চালক বুড়িমারী স্থলবন্দরে পণ্য খালাস করে ফেরার কথা থাকলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না থাকায় নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না তারা। তাদের আশ্রয় হয়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে। সেখানেই এক প্রকার অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছেন তারা। গত ৪ এপ্রিল বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পাট-বীজ নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ৬১টি জন ভারতীয় ট্রাক চালক। গত ২৩ দিনেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের ফেরত না নেয়ায় চরম কষ্টে দিন যাপন করছেন। তাদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন বাংলাদেশি পাট বীজ আমদানিকারক স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরাও।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ভারতের চ্যাংড়াবান্দা স্থলবন্দরে ১৪ দিন আটকে থাকার পর উভয় দেশের সরকারি নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গত ৪ এপ্রিল বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পাটবীজগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেগুলো খালাস করার পর থেকে চালকদের নিজ দেশে ফেরত নেয়নি ভারত। করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকার কারণে স্থানীয় প্রশাসন ট্রাক ও চালকদের নিচ্ছে না বলে চ্যাংড়াবান্দা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার জানিয়েছেন। এ কারণেই তাদের নিতে দেরি হচ্ছে।বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, দফায় দফায় দুই দেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা আলোচনা করেও আটকে পড়া ট্রাক চালকদের দেশে ফেরার বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ফারুক হোসেন এই ট্রাক চালকগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনিই তাদের প্রতিদিনের খাবারের ব্যবস্থা করছেন।বুড়িমারী স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ডিডি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থলবন্দরের ইয়ার্ডের ভেতরেই ট্রাক ও চালকদের রাখা হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি কারক ব্যবসায়ীরাই খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দিচ্ছেন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করলে তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান তিনি । বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস সহকারী কমিশনার (এসি) সোমেন কুমার চাকমা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করেও এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, কুচবিহার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্কের ভিডিও কনফারেন্সে এবং ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। আশা করি তাদের দ্রুতই ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password