২০১২ সালে পেশাদার লীগে ফুটবল খেলতে এক মাসের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন নাইজেরিয়ান নাগরিক মরো মহাম্মদ ও মরিসন। এর পর তারা নামি একটি ক্লাবের হয়ে ফুটবলও খেলেছেন। কিন্তু এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আট বছর পেরিয়ে গেলেও তারা বাংলাদেশেই অবস্থান করছিলেন। শুধু তাই নয়, এ দীর্ঘসময় তারা ঢাকায় বিস্তার করেছিলেন প্রতারণার জাল।
ফেসবুকে বন্ধুত্বের পর উপহার দেওয়ার নাম করে তারা অনেক মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। অবশেষে দুই সহযোগীসহ এ দুই বিদেশি প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত মঙ্গলবার রাজধানীর দক্ষিণখানের কাওলা ও ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন ঘানার নাগরিক সিসম ও অ্যান্থনি। তারা দুজনও স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি ল্যাপটপ, বেশকিছু সিম এবং ছয়টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। চার প্রতারককে গ্রেপ্তার নিয়ে গতকাল বুধবার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত জানান, এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ চার বিদেশি অভিনব কৌশলে প্রতারণা করছিল। তারা বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের নামে ফেসবুক আইডি খুলে নানাজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করত। একপর্যায়ে ফেসবুকের মেসেঞ্জার আইডি থেকে দিত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ পার্সেল উপহার পাঠানোর প্রস্তাব।
এসব গিফট বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলে তারা ভুক্তভোগীকে জানাত এবং তা রিসিভ করতে বলত কাস্টমস থেকে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তি সেই পার্সেল গ্রহণ করতে গেলে চক্রের অন্য সদস্যরা নিজেদের কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে শুল্ক বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধের জন্য চাপ দিত। এ সময় উপহার গ্রহণ না করলে আইনি জটিলতার ভয়ও দেখানো হতো। সম্প্রতি এক ভিকটিম তাদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৫ হাজার টাকা জমা দেন।
সৈয়দা জান্নাত আরও জানান, গত কয়েক মাসে আসামিরা সারাদেশে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করলেও এখানে তাদের অবস্থানের বৈধ কোনো কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট দেখাতে পারেনি। এ চক্রের সদস্যরা পর্যটক, খেলোয়াড়, ব্যবসা ও স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে স্থানীয় কিছু এজেন্টের সহায়তায় এ ধরনের প্রতারণা করে আসছিল।
সল্পমেয়াদি ভিসায় দেশে আসা আফ্রিকানদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর তারা কী করে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে এসবির (পুলিশের বিশেষ শাখা) সঙ্গে আলোচনা করবে সিআইডি। কারণ ইমিগ্রেশন বিভাগ এসবির অধীনে। গ্রেপ্তার বিদেশিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন